ধর্মান্তর ইস্যুতে রাজস্থানে নতুন আইন পাস, কংগ্রেসের কটাক্ষ

রাজস্থান বিধানসভার (Rajasthan Assembly) বর্ষাকালীন অধিবেশনে মঙ্গলবার দীর্ঘ আলোচনার পর পাস হল ‘রাজস্থান অবৈধ ধর্মান্তর নিষিদ্ধকরণ বিল, ২০২৫’। এই আইনকে ঘিরে শাসক ও বিরোধী দুই…

Rajasthan Assembly passes anti-conversion bill with life imprisonment provision

রাজস্থান বিধানসভার (Rajasthan Assembly) বর্ষাকালীন অধিবেশনে মঙ্গলবার দীর্ঘ আলোচনার পর পাস হল ‘রাজস্থান অবৈধ ধর্মান্তর নিষিদ্ধকরণ বিল, ২০২৫’। এই আইনকে ঘিরে শাসক ও বিরোধী দুই শিবিরেই তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। রাজ্যের সংসদীয় মন্ত্রী জোগারাম প্যাটেল দাবি করেছেন, নতুন আইনে বাধ্যতামূলক বা প্রতারণার মাধ্যমে ধর্মান্তর ঘটলে সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

প্যাটেল বলেন, “এই আইনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে চালু হওয়া অনুরূপ আইনগুলি অধ্যয়ন করে রাজস্থানে এটি প্রণয়ন করেছি। বিরোধীদের প্রতিবাদের মধ্যেও এই বিল পাস হয়েছে। কংগ্রেসের কিছু বিধায়ক আলোচনাই চায়নি, যা দুঃখজনক।”

   

নতুন আইনে বলা হয়েছে, যেকোনও প্রকার জোরজবরদস্তি, প্রলোভন, প্রতারণা বা ভয় দেখিয়ে ধর্মান্তর ঘটালে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ন্যূনতম সাত বছর থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন পর্যন্ত জেল হতে পারে। এছাড়াও আর্থিক জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে। সরকারের দাবি, এই আইন পাশ হওয়ায় রাজ্যে “জোরপূর্বক ধর্মান্তর” প্রতিরোধে আইনি কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে।

রাজ্যের মন্ত্রী অজয়নাশ গেহলট অভিযোগ করেন, কংগ্রেস রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আইনটির আলোচনা বয়কট করেছে। তাঁর বক্তব্য, “কংগ্রেস আলোচনায় অংশ নেয়নি কারণ তাদের দলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত চারজন বিধায়ক আছেন। এটাই প্রমাণ করে কংগ্রেস কেবল তোষণ রাজনীতি করছে। এই কারণেই তারা আজ এমন দুর্বল অবস্থায়।”

মন্ত্রী জওহর সিং বেধম এই আইনকে “ঐতিহাসিক পদক্ষেপ” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “রাজস্থান বিধানসভা আজ একটি দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে আমরা রাজ্যে জোরপূর্বক ধর্মান্তর বন্ধে এক শক্তিশালী বার্তা দিয়েছি।”

অন্যদিকে, রাজস্থানের বিরোধী দলনেতা টিকা রাম জুলি সরকারকে পরিসংখ্যান না দেখিয়ে আইন পাস করার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “প্রথমে তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। গত পাঁচ বছরে একটি বড় সহিংস ঘটনার খবরও পাওয়া যায়নি। সরকার নিজেই বলছে, মাত্র ১৩টি মামলা হয়েছে। যদি এত বড় পরিসরে ধর্মান্তর ঘটত, তবে সরকার কেন চোখ বন্ধ করে বসে থাকত?”

Advertisements

তিনি আরও জানান, কোনও সঠিক তদন্ত ছাড়াই এই আইন আনা হয়েছে, যা কেবল বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডা। “এটি একেবারেই রাজনৈতিক পদক্ষেপ। মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানার মতো রাজ্যগুলিতেও একই আইন আনা হয়েছে। বিজেপি যেখানে ক্ষমতায়, সেখানে এই ধরনের আইন চাপিয়ে দিচ্ছে। যদি এতই প্রয়োজন হয়, তবে গোটা দেশে একটি অভিন্ন আইন আনুক কেন্দ্র সরকার,” মন্তব্য করেন জুলি।

রাজস্থানে পাস হওয়া এই বিল বিজেপি শাসিত অন্যান্য রাজ্যের মতোই বিতর্ক তৈরি করেছে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা ও উত্তরাখণ্ডে ইতিমধ্যেই অনুরূপ আইন কার্যকর হয়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ করছে, বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক লাভ তুলতে চাইছে। অন্যদিকে রাজ্য সরকার বলছে, এই আইন সমাজে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে।

আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, এত কঠোর শাস্তি নির্ধারণের ফলে আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কা থাকছে। কারণ ‘জোরপূর্বক ধর্মান্তর’-এর সংজ্ঞা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা না হলে সাধারণ আন্তঃধর্মীয় বিবাহ বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকেও কখনও কখনও অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার সম্ভাবনা থেকে যাবে। আবার অন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের নজরদারিতে থাকলে এই আইন জোরপূর্বক ধর্মান্তর রোধে কার্যকর হতে পারে।
বিল পাসের পর রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন বিতর্কের সূচনা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের প্রাক্কালে এই আইনকে ঘিরে শাসক বিজেপি জনসমর্থন

কুড়োতে চাইবে বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের। অপরদিকে কংগ্রেস এই আইনকে তোষণ রাজনীতির অভিযোগ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।

‘রাজস্থান অবৈধ ধর্মান্তর নিষিদ্ধকরণ বিল, ২০২৫’ আইন হিসেবে কার্যকর হলে তা নিঃসন্দেহে দেশের সবচেয়ে কঠোর ধর্মান্তর বিরোধী আইনগুলির একটি হয়ে উঠবে। একদিকে বিজেপি সরকার এটিকে সামাজিক স্থিতিশীলতার রক্ষাকবচ বলে দাবি করছে, অন্যদিকে বিরোধীরা একে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। এখন দেখার বিষয়, আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কতটা নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হয়।