‘অপারেশন সিঁদুরের’ আগে পাকিস্তানকে সতর্ক করা নিয়ে জয়শঙ্করকে নিশানা রাহুলের

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (rahul) সোমবার বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের বিরুদ্ধে তার পূর্বের অভিযোগ জনিয়েছেন । তিনি দাবি করেছেন, অপারেশন…

rahul targets s jaishankar

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (rahul) সোমবার বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের বিরুদ্ধে তার পূর্বের অভিযোগ জনিয়েছেন । তিনি দাবি করেছেন, অপারেশন সিঁদুর শুরু হওয়ার ‘প্রথম পর্যায়ে’ কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তানকে জানিয়েছিল, যা তিনি ‘ভুল’ নয়, বরং ‘অপরাধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এই অভিযোগের জবাবে সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এটিকে ‘তথ্যের সম্পূর্ণ বিকৃতি’ বলে উল্লেখ করেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রাহুল গান্ধীর (rahul)এই মন্তব্যকে ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ বলে সমালোচনা করেছে এবং এই অভিযোগের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

   

রাহুল গান্ধীর অভিযোগ (rahul)

শনিবার রাহুল গান্ধী (rahul)এক্স-এ ড. জয়শঙ্করের একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে বিদেশমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। ভিডিওতে জয়শঙ্কর বলেন, “অভিযানের শুরুতে আমরা পাকিস্তানকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলাম যে, আমরা জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে আঘাত করছি, সামরিক ঘাঁটিতে নয়।

তাই সামরিক বাহিনীর এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ না করার বিকল্প ছিল। তারা এই ভালো পরামর্শ গ্রহণ করেনি।” এই ভিডিও শেয়ার করে রাহুল লিখেছেন, “অভিযানের শুরুতে পাকিস্তানকে জানানো একটি অপরাধ। বিদেশমন্ত্রী প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে ভারত সরকার এটি করেছে। কে এর অনুমোদন দিয়েছে? এর ফলে আমাদের বিমানবাহিনী কতগুলো বিমান হারিয়েছে?”

সোমবার এই ভিডিও পুনরায় শেয়ার করে রাহুল (rahul)বলেন, “বিদেশমন্ত্রীর নীরবতা কেবল তাৎপর্যপূর্ণ নয়, এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। তাই আমি আবার জিজ্ঞাসা করছি: পাকিস্তান জানার কারণে আমরা কতগুলো ভারতীয় বিমান হারিয়েছি? এটি কোনও ভুল ছিল না, এটি একটি অপরাধ। দেশ সত্য জানার অধিকার রাখে।”

কংগ্রেস নেতা পবন খেরা একটি সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুলের (rahul) অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বিদেশমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের মধ্যে ‘সম্পর্ক’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “এটি কূটনীতি নয়, এটি গুপ্তচরবৃত্তি। বিদেশমন্ত্রী যা বলেছেন, সবাই তা শুনেছে। এখন এটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”

খেরা আরও জিজ্ঞাসা করেন, এই তথ্যের কারণে কি জঙ্গি মাসুদ আজহার এবং হাফিজ সাঈদ ভারতের বিমান হামলা থেকে পালিয়ে যেতে পেরেছেন? তিনি বলেন, “এই বক্তব্য থেকে মনে হয় জঙ্গিরা তাদের ঘাঁটি থেকে পালিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিদেশমন্ত্রীকে এর কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।”

আইপিএলে প্রথমবার! অধিনায়কত্বে ঐতিহাসিক রেকর্ড শ্রেয়াসের

সরকার ও বিজেপির জবাব

বিদেশ মন্ত্রক রাহুল গান্ধীর (rahul)অভিযোগকে ‘তথ্যের সম্পূর্ণ বিকৃতি’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। মন্ত্রকের বহির্গামী প্রচার (এক্সপি) বিভাগ জানিয়েছে, “বিদেশমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা অপারেশন সিঁদুর শুরু হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছিলাম। এটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যে অভিযানের আগেই এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। এই তথ্যের বিকৃতি আমরা প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করছি।”

Advertisements

সরকার অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সামরিক অপারেশনের ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাইয়ের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করেছে। ঘাই বলেছিলেন, “অপারেশন সিঁদুরের তাৎক্ষণিক পরে আমরা আমার পাকিস্তানি সমকক্ষের কাছে সন্ত্রাসের কেন্দ্রে আঘাত করার আমাদের বাধ্যবাধকতা জানানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু এই অনুরোধ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং জানানো হয় যে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসন্ন। আমরা অবশ্যই প্রস্তুত ছিলাম।”

প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (পিআইবি) ফ্যাক্ট-চেক ইউনিটও জানিয়েছে, বিদেশমন্ত্রীকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হচ্ছে। পিআইবি এক্স-এ বলেছে, “সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের বক্তব্য থেকে ভুলভাবে বোঝানো হচ্ছে যে ভারত অপারেশন সিঁদুর শুরুর আগে পাকিস্তানকে জানিয়েছিল। বিদেশমন্ত্রী এমন কোনও বক্তব্য দেননি। সতর্ক থাকুন এবং প্রতারণামূলক তথ্যে বিশ্বাস করবেন না।”

বিজেপি রাহুল গান্ধীর (rahul)মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। বিজেপির মুখপাত্র তুহিন সিনহা এনডিটিভি-কে বলেন, “রাহুল গান্ধী বারবার বিদেশমন্ত্রীর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করছেন। তিনি কিছু শক্তির ইশারায় কাজ করছেন বলে মনে হচ্ছে। বিদেশমন্ত্রী যখন বিদেশে রয়েছেন এবং আমাদের কূটনৈতিক মিশন বিদেশে যাচ্ছে, তখন তিনি কেন এই প্রশ্ন তুলছেন? এটি দুরভিসন্ধির গন্ধ বহন করে।”

সিনহা আরও বলেন, “ডিজিএমও-র বক্তব্যে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। কেবলমাত্র কোনও অপরিণত, নীচ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যক্তিই বারবার বিদেশমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতে পারেন, যখন সন্দেহ একাধিকবার দূর করা হয়েছে। এটি রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। পহেলগাঁও হামলার পর তিন সপ্তাহ ধরে সরকারের পাশে থাকার ভান করা রাহুল গান্ধী এখন তার নীচ মানসিকতায় ফিরে গেছেন।”

অপারেশন সিঁদুরের পটভূমি

অপারেশন সিঁদুর ৭ মে শুরু হয়েছিল, যা ছিল ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ। এই হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তইবা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে যুক্ত নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালায়, যার ফলে ১০০-র বেশি জঙ্গি নিহত হয়। ১০ মে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।

রাজনৈতিক তরজা

রাহুল গান্ধীর (rahul) অভিযোগ এবং সরকারের পাল্টা জবাব এই ঘটনাকে একটি তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কে পরিণত করেছে। বিজেপি রাহুলের মন্তব্যকে ‘পাকিস্তানের প্রোপাগান্ডা’র সঙ্গে তুলনা করে বলেছে, এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি কংগ্রেসের অবহেলার প্রমাণ। অন্যদিকে, কংগ্রেস দাবি করছে, সরকার এই ঘটনার সত্য গোপন করছে এবং জনগণের কাছে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।

অপারেশন সিঁদুর নিয়ে রাহুল গান্ধী (rahul)এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে চলমান এই বিতর্ক ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিদেশ মন্ত্রক এবং বিজেপি রাহুলের অভিযোগকে ‘তথ্যের বিকৃতি’ বলে প্রত্যাখ্যান করলেও, কংগ্রেস এই ইস্যুতে সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই বিতর্ক জাতীয় নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক কৌশল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে, যার উত্তর আগামী দিনে জনগণের কাছে স্পষ্ট হবে।