সোমবার ১১ সংসদের মকর দ্বার থেকে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় নির্বাচন সদনে বিরোধী দলের সাংসদদের একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় (Delhi Police)। এই মিছিলের উদ্দেশ্য ছিল বিহারে চলতে থাকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে “ভোট চুরি” (ভোটার জালিয়াতি) এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। তবে, মিছিলটি ট্রান্সপোর্ট ভবনের কাছে পৌঁছানোর পর দিল্লি পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে এই মিছিল আটকে দেয়, যার ফলে সাংসদরা নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে পৌঁছাতে পারেননি।
মিছিলের পটভূমি ও নেতৃত্ব
কংগ্রেসের লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা, শরদ পাওয়ার, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ও’ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্র, ডিএমকে’র টি আর বালু, শিবসেনা (ইউবিটি)’র সঞ্জয় রাউত এবং আরজেডি, সিপিআই, সিপিএম, এনসিপি (এসপি) এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের মতো দলের সাংসদরা। প্রায় ৩০০ জনেরও বেশি সাংসদ এই মিছিলে অংশ নেন। মিছিল শুরুর আগে বিরোধী সাংসদরা মকর দ্বারে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে তাদের প্রতিবাদ শুরু করেন।
প্রতিবাদের কারণ
বিরোধী দলগুলি বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, যা তাদের মতে ভোটার তালিকায় কারচুপির মাধ্যমে ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা। এছাড়া, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কথিত জালিয়াতির অভিযোগও তুলেছেন তারা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ১,০০,০০০ ভোট “চুরি” হয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, একজন ব্যক্তির নাম একাধিক ভোটকেন্দ্রে তালিকাভুক্ত ছিল, এবং ভোটার তালিকার ডিজিটাল ডেটা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন, যাতে এটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে জালিয়াতি শনাক্ত করা যায়।
দিল্লি পুলিশের বাধা
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, এই মিছিলের জন্য কোনও আনুষ্ঠানিক অনুমতি চাওয়া হয়নি। ট্রান্সপোর্ট ভবনের কাছে পুলিশ ব্যারিকেড স্থাপন করে মিছিলটিকে থামিয়ে দেয়। কিছু সাংসদ, যেমন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র, ব্যারিকেড টপকে প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করেন।
কংগ্রেস সাংসদ সৈয়দ নাসির হুসেন অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তাদের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দিচ্ছে এবং সাংসদদের গ্রেফতার করছে। পুলিশের মেগাফোনে ঘোষণা করা হয় যে, সাংসদদের এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।
নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীর অভিযোগকে “ভুল” বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং তাঁকে কথিত জালিয়াতি ভোটারদের তথ্য শপথপূর্বক জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে, কমিশন কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশের অনুরোধে ৩০ জন সাংসদের সঙ্গে বেলা ১২টায় একটি সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছে।
প্রতিবাদের প্রকাশ
বিরোধী সাংসদরা লাল টুপি পরেছিলেন, যাতে লাল ক্রস দিয়ে “এসআইআর” এবং “ভোট চুরি” শব্দগুলি লেখা ছিল। তারা ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, বাংলা এবং মারাঠি ভাষায় পোস্টার ও ব্যানার নিয়ে মিছিল করেন , যেখানে লেখা ছিল “এসআইআর + ভোট চুরি = গণতন্ত্রের হত্যা” এবং “এসআইআর – লোকতন্ত্র পর বার”। কংগ্রেস নেতা প্রমোদ তিওয়ারি এই মিছিলকে মহাত্মা গান্ধীর দাণ্ডি মিছিলের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “রাহুল গান্ধী গান্ধীজির পথে হাঁটছেন… আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে শোনার দাবি জানাব।”
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জবাব, ভারতীয় কূটনীতিকদের গ্যাস–জল–সংবাদপত্র বন্ধ পাকিস্তানে
সংসদে প্রভাব
এই প্রতিবাদের জেরে লোকসভা ও রাজ্যসভা দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতুবি করা হয়। বিরোধী সাংসদরা সংসদে এই বিষয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন এবং প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। স্পিকার ওম বিড়লা প্রশ্নোত্তর পর্ব চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যাঘাতের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এই মিছিল বিরোধী দলগুলির নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের দাবিকে আরও জোরালো করেছে। তবে, পুলিশের বাধা এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া এই বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে। বিরোধীরা দাবি করছে, গণতন্ত্রের ভিত্তি “এক ব্যক্তি, এক ভোট” ধারণার উপর আঘাত হানা হচ্ছে। এই ঘটনা ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।