পাটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচনে (Bihar Assembly Election) বাকি আর দু-সপ্তাহেরও কম সময়। সকলের মনে একটাই প্রশ্ন, আগামী ৫ বছরের জন্য কার হাতে উঠবে বিহারের বাগডোর? নির্বাচনের ডঙ্কা বাজতেই জোরকদমে ময়দানে প্রচারে নেমে গিয়েছে প্রায় সব রাজনৈতিক দল। কিন্তু আগস্ট মাসে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’র নামে কার্যত বিহারের রাজনীতিতে ঝড় তুলে দেওয়া রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) নেই পাত্তা!
গত ১ সেপ্টেম্বর ভোটার অধিকার যাত্রার অন্তিম ক্ষণে শেষবার বিহার গিয়েছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহু গান্ধী। সেদিনের জনসভায় বিহারের বেকারত্ব, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং শিক্ষার উপর জোরালো বক্তব্য রেখে ঘোষণা করেছিলেন: “বিহারের উন্নতি হলে, ভারতও উন্নত হবে”। সেইসময় রাহুলকে দেখে মনে হয়েছিল, আসন্ন নির্বাচনে বিহারের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে বিরোধী জোটকে নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তিনি।
কিন্তু গত দু-মাসে ভোটমুখী রাজ্যে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথের মত বিজেপির হেভি ওয়েট নেতা, এমনকি আরজেডির তেজস্বী যাদব ময়দানে নামলেও দেখা মেলেনি কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর। এদিকে ‘হাই কমান্ডের’ কাছ থেকে কোনও নির্দেশ না পাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে রাজ্য-কংগ্রেস (Congress), বলে খবর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কংগ্রেস প্রার্থী স্বীকার করেছেন, “মানুষ আমাদের জিজ্ঞাসা করে তোমাদের শীর্ষ নেতা কোথায়? আমরা কি উত্তর দেব? গান্ধী পরিবারের মুখ ছাড়া আমরা কীভাবে ভোটারদের আস্থা পাবো?” ভাগলপুরের এক তরুণ কংগ্রেস কর্মী হতাশ কণ্ঠে বলেন, “আমরা প্রতিদিন পোস্টার লাগাচ্ছি, রোড শো করছি, মানুষের সাথে দেখা করছি কিন্তু মঞ্চে রাহুল গান্ধী ছাড়া এই লড়াই অসম্পূর্ণ মনে হচ্ছে। জনতা তাঁর কথা শুনতে চায়।”
মহাগাঁঠবন্ধরের টানাপড়েনই কি কারণ?
ভোটার অধিকার যাত্রায় রাহুলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হেঁটেছিলেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব (Tejaswi Yadav)। রাহুলের মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন নিজের নাম। এরপর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ নিয়ে ব্যাপক টানাপড়েন, ধোঁয়াশার পর অবশেষে তেজস্বীকেই বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ঘোষণা করা হয়।
বর্তমানে, তেজস্বী জোরকদমে নির্বাচনী প্রচার চালালেও ঝিমিয়ে পড়া কংগ্রেস (Congress) জোটের গলার কাঁটা হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এক আরজেডি নেতা বলেই ফেলেন, “ঐক্যের মাধ্যমেই নির্বাচন লড়া হয়। যদি কোন মিত্র অর্ধ-হৃদয়ে লড়ে, তাহলে তাকে সমর্থন করা সমস্যাজনক হয়ে পড়ে এবং জোটের কাছে তা বোঝা হয়ে যায়।”
যদিও, সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা জানিয়েছেন, “রাহুল-জির কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়ে গিয়েছে। বিহারে তাঁর সমাবেশের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমরা ভিড়ের রাজনীতি করি না, আমরা ইস্যুভিত্তিক রাজনীতি করি।”
রাহুলের অনুপস্থিতির পেছনে মূলত তিনটি কারণ ধরা হচ্ছে:
কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভোটমুখী বিহারে রাহুলের অনুপস্থিতির পেছনে মূলত তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে।
১) অভ্যন্তরীণ কৌশলগত মতবিরোধ: রাজ্য নেতাদের এবং হাইকমান্ডের মধ্যে আসন ভাগাভাগি এবং প্রচার পরিকল্পনা নিয়ে দ্বন্দ্ব।
২) জাতীয় স্বার্থ: বিহার বিধানসভার পরিবর্তে কংগ্রেস মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার উপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছে, যেখানে জয়ের সম্ভাবনা বেশি দেখছে কংগ্রেস।
৩) প্রচারের দিক পরিবর্তন: রাহুল গান্ধী ভিন্ন নির্বাচনী প্রচার বেছে নিয়েছেন। জনতার রাজনীতি থেকে ইস্যু-ভিত্তিক রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন রাহুল গান্ধী।
যদিও, রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) অনুপস্থিতি এখন বিহারের রাজনৈতিক জল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই নির্বাচন কেবল তাঁর রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতাই নয়, বরং কংগ্রেসের দিকনির্দেশনা এবং বিশ্বাসযোগ্যতাও পরীক্ষা করছে। রাজনীতিতে, বিলম্বিত সিদ্ধান্ত প্রায়শই কৌশল নয় বরং বিভ্রান্তির ইঙ্গিত দেয়। তাই বিহার জুড়ে মানুষের এখন একটাই প্রশ্ন, রাহুল গান্ধীর নীরবতা কি ঝড়ের আগের শান্তি নাকি কেবল কংগ্রেসের ক্লান্তির লক্ষণ?


