রাহুল গান্ধীর ‘জেন জেড বিপ্লব’: নেপাল উদাহরণে দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক

নয়াদিল্লি: নেপালের রাজনীতির ইতিহাসে কাঠমাণ্ডুর রাস্তায় আন্দোলন ও হিংসার সেই দৃশ্য এখনও চোখে ভাসে৷ দুর্নীতি ও রাজবংশবাদের বিরুদ্ধে যুবসমাজের তীব্র প্রতিবাদ। এই প্রেক্ষাপটকে উদাহরণ হিসেবে…

Rahul Gandhi’s Nepal Allusion

নয়াদিল্লি: নেপালের রাজনীতির ইতিহাসে কাঠমাণ্ডুর রাস্তায় আন্দোলন ও হিংসার সেই দৃশ্য এখনও চোখে ভাসে৷ দুর্নীতি ও রাজবংশবাদের বিরুদ্ধে যুবসমাজের তীব্র প্রতিবাদ। এই প্রেক্ষাপটকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী ভারতের যুবক ভোটার ও জেন জেডকে দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের বাহক হিসেবে মন্তব্য করলেন৷ তাঁর এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের ঝড় তুলেছে।

এক্স-এ লিখলেন রাহুল

রাহুল গান্ধী এক্স-এ লিখলেন, “দেশের যুবসমাজ, শিক্ষার্থী এবং জেন জেড সংবিধান রক্ষা করবে, গণতন্ত্রকে বাঁচাবে এবং ভোট চুরি রুখবে। আমি সবসময় তাদের পাশে থাকব। জয় হিন্দ!” যদিও তিনি নেপালের কথা সরাসরি উল্লেখ করেননি, বিজেপি তা জোরালোভাবে সমালোচনা করেছে।

   

বিজেপি স্পোক্সপারসন প্রদীপ ভান্ডারি মন্তব্য করেছেন, “রাহুল গান্ধীর বক্তব্য বিপজ্জনক। নেপালের জেন জেড আন্দোলন দুর্নীতি ও রাজবংশবাদের বিরুদ্ধে ছিল, যা কংগ্রেসের নিজস্ব রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। একজন নেতা হিসেবে তিনি যদি রাস্তার রাজনীতি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন, তাহলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তার আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।”

সতর্ক করলেন সঞ্জয় রাউত Rahul Gandhi’s Nepal Allusion

শিবসেনা (ইউবিট) নেতা সঞ্জয় রাউতও সতর্ক করে বলেছেন যে, ভারতেও অনুরূপ পরিস্থিতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে, এবং বিজেপিকে প্রস্তুত থাকতে হবে। জেডি(U) নেতা নীরজ কুমার বলেছেন, “নেপাল বা বাংলাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ভারত একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র; আমাদের জনগণ স্বৈরশাসন মানে না। তুলনা করলে ভারতীয় প্রেক্ষাপট অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।”

প্রাক্তন বিজেপি এমপি সুব্রত পাঠক মন্তব্য করেছেন, নেপাল, বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার মতো বিপ্লব যদি ভারতে ঘটে, তাহলে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও সমাজবাদী নেতা অখিলেশ যাদবের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা মণিশ তেওয়ারী সতর্কভাবে বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার সরকার পতনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ, নেপাল—পরবর্তী কে?”

Advertisements

ডেটা বলছে, রাহুল গান্ধী যে জেন জেড ভোটারদের সমর্থন আকর্ষণ করতে চাইছেন, তারা এখনও প্রধানত বিজেপি ও এনডিএর পাশে রয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে যুব ভোটের প্রায় ৪১ শতাংশ এনডিএর হাতে ছিল। যুবক-কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন ও শিক্ষায় সরকারের মনোযোগ থাকায় বিজেপি আত্মবিশ্বাসী যে এই সমর্থন সহজে সরে যাবে না।

রাজনৈতিক ও সংবিধানগত দ্বন্দ্ব

কংগ্রেসের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের রাজনৈতিক ও সংবিধানগত দ্বন্দ্ব। বিরোধীদলের নেতা হিসেবে তিনি সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার দাবিদার। তবুও নেপালের উদাহরণ দিয়ে “রাস্তার রাজনীতি”কে উৎসাহিত করলে বোঝায়, পরিবর্তন ভোটের মাধ্যমে নয়, সরাসরি আন্দোলনের মাধ্যমে আসবে—যা শক্তিশালী ভারতীয় গণতন্ত্রের সঙ্গে খাপ খায় না।

নিরবিচ্ছিন্নভাবে নির্বাচনী কমিশনের প্রতি অভিযোগ করে তিনি এই দ্বন্দ্ব আরও গভীর করেছেন। সমালোচকরা মনে করেন, এই ধরনের মন্তব্য সংবিধান ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এবং ভোটাধিকার যাত্রার প্রচারণাকেও প্রভাবিত করতে পারে।

সত্যিই, এই বিতর্ক কেবল রাজনৈতিক নাটক নয়; এটি ভারতের গণতান্ত্রিক স্থিতি, যুব সমাজের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং বিরোধীদলের রাজনৈতিক কৌশলকে কেন্দ্র করে একটি প্রিমিয়াম রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়।