নয়াদিল্লি: ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ঘিরে ফের তোলপাড়। বৃহস্পতিবার একটি বহুচর্চিত সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করলেন, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হাতে এসেছে যে সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে কংগ্রেসপন্থী ভোটারদের নাম মুছে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “আজ আমি এখানে এক শতাংশও অনুমান থেকে কিছু বলছি না। যা বলছি, সবটাই শতভাগ প্রমাণভিত্তিক।”
আলন্দ থেকে শুরু উদাহরণ
কর্ণাটকের আলন্দ বিধানসভা কেন্দ্রের উদাহরণ টেনে রাহুল জানান, সেখান থেকে ৬,০১৮ ভোট মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। যদিও তাঁর দাবি, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কিন্তু ঘটনাটি ধরা পড়ে যায় কাকতালীয়ভাবে। “অপরাধীরা ধরা পড়ল যেমন অন্য অপরাধ ধরা পড়ে— একেবারে কাকতালীয়ভাবে,” কটাক্ষ করেন রাহুল।
ভুয়ো লগইন, বাইরে থেকে ফোন নম্বর Rahul Gandhi Voter Deletion
রাহুলের অভিযোগ, কংগ্রেস এগিয়ে থাকা বুথগুলোকেই নিশানা করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি দেখান ‘গোদাবাই’ নামে এক মহিলার ভুয়ো লগইন আইডি তৈরি করে অন্তত ১২ জন ভোটার মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। অথচ গোদাবাই নিজেই জানেন না এই ঘটনার কথা।
তিনি আরও জানান, যেসব ফোন নম্বর ব্যবহার করে ভোটার মুছে ফেলা হচ্ছিল, সেগুলো কর্ণাটকের নয়— দেশের বিভিন্ন রাজ্যের। স্লাইডশো প্রেজেন্টেশনে সেই নম্বরও তুলে ধরেন তিনি।
‘মানবসম্ভব নয়’
আরেক উদাহরণে রাহুল জানান, ‘সুর্যকান্ত’ নামে এক ব্যক্তি ১৪ মিনিটে ১২টি ভোট মুছে ফেলেছেন। অন্যদিকে, ‘নাগরাজ’ নামে এক ব্যক্তি ভোর ৪টা ৭ মিনিটে মাত্র ৩৮ সেকেন্ডে দু’টি ফর্ম পূরণ করেছেন। “এটা মানবসম্ভব নয়। যুব সমাজকে অনুরোধ করছি, নিজেরাই চেষ্টা করে দেখুন কত সময় লাগে,” বলেন রাহুল। তাঁর অভিযোগ, কল সেন্টার স্তরে কেন্দ্রীভূতভাবে একটি অটোমেটেড প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই কাজ হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি আক্রমণ
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ তোলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে। রাহুলের দাবি, কর্ণাটক সিআইডি গত দেড় বছরে অন্তত ১৮ বার চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে, ভোটার ডিলিশন কাণ্ডের তথ্য চাইতে। কিন্তু কোনও কার্যকর তথ্য কমিশন দেয়নি। “ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সেইসব মানুষদের আড়াল করছেন, যারা ভারতীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে,” অভিযোগ রাহুলের।
আগের অভিযোগ ও বর্তমান ধারাবাহিকতা
উল্লেখ্য, ৭ আগস্টের প্রথম সাংবাদিক বৈঠকেও রাহুল গান্ধী ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছিলেন। দাবি করেছিলেন, বেঙ্গালুরুর মহাদেবপুরা কেন্দ্রে ১ লক্ষের বেশি ভুয়ো ভোটার নাম পাওয়া গিয়েছে। কংগ্রেসের ৪০ সদস্যের টিম ছয় মাস ধরে ওই তদন্ত চালায়। তাঁর অভিযোগ ছিল, শুধু কর্ণাটক নয়, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানাতেও একইভাবে নির্বাচন ‘চুরি’ হয়েছে।
রাহুলের সাম্প্রতিক অভিযোগের পর, ভোটার তালিকা ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে ফের প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে দেশের রাজনীতিতে।