১৯৮৪ র ব্লু স্টার প্রসঙ্গে মার্কিন মুলুকে অস্বস্তিতে রাহুল

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সে একটি আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছিলেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী (rahul gandhi)। এই সভায়…

rahul gandhi answers for blue star

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সে একটি আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছিলেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী (rahul gandhi)। এই সভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন শিখ যুবক ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গা এবং কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে তীক্ষ্ণ প্রশ্ন তুলেছিলেন।

তিনি রাহুল গান্ধীর পূর্ববর্তী বক্তব্যের উল্লেখ করেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “ভারতে লড়াইটা এই নিয়ে যে একজন শিখ পাগড়ি পরতে পারবে কিনা, কড়া পরতে পারবে কিনা, গুরুদ্বারায় যেতে পারবে কিনা।”

   

কালবৈশাখীতে ভেস্তে যাবে KKR vs RR হাই-ভোল্টেজ লড়াই? কলকাতার আবহাওয়া রিপোর্ট জানুন

শিখ যুবক এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন

শিখ যুবক এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন, “আপনি বিজেপির ভারত নিয়ে শিখদের মনে ভয়ের সঞ্চার করেন, কিন্তু আমরা শুধু কড়া বা পাগড়ি পরতে চাই না, আমরা মুক্তভাবে আমাদের মত প্রকাশ করতে চাই, যা কংগ্রেসের (rahul gandhi) শাসনকালে সম্ভব হয়নি।” যুবকটি আরও উল্লেখ করেন যে আনন্দপুর সাহিব প্রস্তাবনায় দলিত অধিকারের কথা বলা হয়েছে এবং এতে বিচ্ছিন্নতাবাদের কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু তৎকালীন কংগ্রেস সরকার এটিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী দলিল হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।

তিনি বলেন, “এটা আপনার দলের কাজ। আপনার দলের মনে হয় ভুল স্বীকার করার পরিপক্কতার অভাব রয়েছে।” তিনি ১৯৮৪ সালের দাঙ্গায় হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আরও অনেক সজ্জন কুমার এখনও কংগ্রেস দলে রয়েছেন।”

যুবকটি রাহুল গান্ধীকে (rahul gandhi) প্রশ্ন করেন, “আপনি আমাদের বিজেপির ভারতকে ভয় করতে বলছেন, কিন্তু শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমঝোতার জন্য কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? এভাবে চললে বিজেপি পাঞ্জাবেও প্রবেশ করবে।”

রাহুল গান্ধীর উত্তর (rahul gandhi)

রাহুল গান্ধী (rahul gandhi) উত্তরে বলেন, “আমি মনে করি না শিখরা কোনো কিছুতে ভয় পায়। আমার বক্তব্য ছিল, আমরা কি এমন একটি ভারত চাই যেখানে মানুষ তাদের ধর্ম পালনে অস্বস্তি বোধ করবে? কংগ্রেসের ভুলের কথা বলতে গেলে, এর অনেক কিছুই ঘটেছে যখন আমি ছিলাম না।

তবে আমি কংগ্রেস দলের ইতিহাসে যা কিছু ভুল হয়েছে, তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।” তিনি আরও বলেন, “আমি প্রকাশ্যে বলেছি যে ৮০’র দশকে যা ঘটেছিল তা ভুল ছিল। আমি একাধিকবার স্বর্ণ মন্দিরে গিয়েছি এবং ভারতের শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমার অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে।”

১৯৮৪ সালের প্রেক্ষাপট

১৯৮০’র দশকে ইন্দিরা গান্ধীর (rahul gandhi) নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার পাঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করেছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন র‍্যাডিকাল শিখ নেতা জর্নাইল সিং ভিন্ডরানওয়ালে। অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে আন্দোলনকারী ভিন্ডরানওয়ালেকে নিষ্ক্রিয় করতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ পরিচালনা করে। এই অভিযানে শিখদের পবিত্র স্থান অকাল তখত ধ্বংস হয়ে যায়, যা শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

কয়েক মাস পরে, ইন্দিরা গান্ধী তার শিখ দেহরক্ষীদের হাতে নিহত হন । এই হত্যার পর শিখদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হিংসা চালানো হয়। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দিল্লি ও অন্যত্র ৩,০০০-এর বেশি শিখ নিহত হন। একাধিক কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এই সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর (rahul gandhi) একটি বক্তব্য, “যখন একটি বড় গাছ পড়ে, তখন মাটি কাঁপে,” বিতর্কের জন্ম দেয় এবং বারবার কংগ্রেসের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

বিজেপির প্রতিক্রিয়া

বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা অমিত মালব্য এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন, শিখ যুবকটি রাহুল গান্ধীকে তাঁর “ভিত্তিহীন ভয় দেখানোর” কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “রাহুল গান্ধী এখন কেবল ভারতেই নয়, বিশ্বজুড়ে উপহাসের পাত্র হয়ে উঠেছেন।” বিজেপি বারবার ১৯৮৪ সালের দাঙ্গা নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তাদের রাজনৈতিক আক্রমণের জবাব দেয়।

শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক

রাহুল গান্ধী (rahul gandhi) তাঁর বক্তব্যে শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্কের কথা উল্লেখ করলেও, ১৯৮৪ সালের দাঙ্গা এখনও কংগ্রেসের জন্য একটি স্পর্শকাতর বিষয়। শিখ সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে এই ঘটনার ক্ষত এখনও রয়ে গেছে। বিজেপি এই বিষয়টিকে পাঞ্জাবে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।

কংগ্রেস দল এই অভিযোগের জবাবে বলেছে যে তারা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তবে, শিখ যুবকের প্রশ্ন এবং রাহুল গান্ধীর উত্তর থেকে স্পষ্ট যে এই ইস্যু এখনও রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে উত্তপ্ত।

১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গা ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। এই ঘটনা নিয়ে কংগ্রেসের ভূমিকা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ে। রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং শিখ যুবকের প্রশ্ন এই ইস্যুটির তাৎপর্য এবং জটিলতাকে পুনরায় সামনে এনেছে। ভবিষ্যতে কংগ্রেস কীভাবে এই ঘটনার প্রভাব মোকাবিলা করে এবং শিখ সম্প্রদায়ের আস্থা ফিরিয়ে আনে, তা তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।