বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul-Gandhi) পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দলিত, অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া জাতি (EBC), অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতি (OBC), এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভোটের উপর জোর দিয়ে কংগ্রেস বিহারে তাদের রাজনৈতিক ভিত্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
রাহুল গান্ধী এই বছর বিহারে একাধিক সফরে এই সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, জাতিগত জনগণনা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি বলেন, “এই দেশে ৯০ শতাংশ মানুষ, যারা ওবিসি, ইবিসি, দলিত ও আদিবাসী, তাদের কণ্ঠস্বর প্রতিষ্ঠান ও উচ্চ পদে প্রতিফলিত হয় না।”
বিহারে কংগ্রেসের কৌশল
বিহারের রাজনীতিতে জাতিভিত্তিক সমীকরণ সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটে থাকা কংগ্রেস এবার স্বতন্ত্রভাবে তাদের প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। এই বছরের শুরুতে কংগ্রেস তাদের বিহার ইউনিটের সভাপতি অখিলেশ প্রসাদ সিং-কে প্রতিস্থাপন করে দলিত নেতা রাজেশ কুমারকে নিয়োগ করেছে, যিনি রবিদাস সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এই সম্প্রদায় বিহারের দলিত (Rahul-Gandhi) জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ। এছাড়া, সুশীল পাসি নামে আরেকজন দলিত নেতাকে বিহারের সহ-ইনচার্জ নিযুক্ত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো কংগ্রেসের দলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ মনোযোগের ইঙ্গিত দেয়।
রাহুল গান্ধী (Rahul-Gandhi) এই বছর বিহারে পাঁচবার সফর করেছেন, যার মধ্যে দারভাঙ্গায় ‘শিক্ষা ন্যায় সংবাদ’ কর্মসূচি এবং গয়ায় ‘সংবিধান সুরক্ষা সম্মেলন’ উল্লেখযোগ্য। দারভাঙ্গায় তিনি দলিত, ইবিসি, ওবিসি, এবং সংখ্যালঘু ছাত্রদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে তাদের অধিকারের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আপনারা প্রতিদিন ২০ ঘণ্টা নিপীড়নের শিকার হন। শিক্ষা ব্যবস্থায় আপনাদের পথে বাধা দেওয়া হয়, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়।” তিনি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ এবং জাতিগত জনগণনার দাবি তুলেছেন।
জাতিগত জনগণনা ও সংরক্ষণের দাবি
রাহুল গান্ধী (Rahul-Gandhi) বিহারের নীতীশ কুমার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে দলিত ও আদিবাসীদের জন্য নির্ধারিত এসসি-এসটি সাব-প্ল্যানের তহবিল বরাদ্দে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “আমরা তিনটি দাবি তুলেছি—জাতিগত জনগণনা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ওবিসি, ইবিসি, এসসি ও এসটি-দের জন্য সংরক্ষণ, এবং এসসি-এসটি সাব-প্ল্যানের তহবিল নিশ্চিত করা।”
তিনি বিহারে ২০২৩ সালে পরিচালিত জাতিগত জনগণনার সমালোচনা করে বলেন, এটি “মানুষকে বোকা বানানোর জন্য” করা হয়েছিল, কারণ এর ফলাফল সংবিধানের নবম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
বিহারে ইবিসি (Rahul-Gandhi) সম্প্রদায় জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশ, যা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোটব্যাঙ্ক। কংগ্রেস এই সম্প্রদায়ের পাশাপাশি দলিত (১৯ শতাংশ) এবং সংখ্যালঘুদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। রাহুল গান্ধী পটনায় জ্যোতিরাও ফুলে ও সাবিত্রীবাই ফুলের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ফুলে’ দেখার মাধ্যমে সামাজিক সংস্কারের বার্তা দিয়েছেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট (Rahul-Gandhi)
বিহারে কংগ্রেসের রাজনৈতিক অবস্থান গত তিন দশকে দুর্বল হয়েছে। ১৯৯০ সালে দলটির ভোট শতাংশ ছিল ২৪.৭৮, যা ২০২০ সালে ৯.৪৮ শতাংশে নেমে আসে। আরজেডি’র সঙ্গে জোটে থাকলেও কংগ্রেস এবার স্বতন্ত্রভাবে তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
দলটি জেলা কমিটিগুলোতে ওবিসি, ইবিসি, এবং দলিত প্রতিনিধিত্ব বাড়িয়েছে এবং কানহাইয়া কুমারের মতো তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দিয়েছে। তবে, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রার্থিত্ব ঘোষণায় কংগ্রেসের অনীহা জোটের মধ্যে উত্তেজনার ইঙ্গিত দেয়।
এবার টু হুইলারেও দিতে হবে টোল, নয়া সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের
চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
কংগ্রেসের এই কৌশলের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিহারে নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ) এবং বিজেপি’র এনডিএ জোট ইবিসি এবং দলিত ভোটের একটি বড় অংশ ধরে রেখেছে। এছাড়া, আরজেডি’র ইয়াদব-মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক কংগ্রেসের জন্য প্রতিযোগিতা তৈরি করে।
সমালোচকরা বলছেন, রাহুল গান্ধীর (Rahul-Gandhi) জাতিগত জনগণনা ও সংরক্ষণের দাবি নির্বাচনী লাভের জন্য করা হচ্ছে। বিজেপি নেতারা রাহুলের বক্তব্যকে “দ্বিচারিতা” বলে সমালোচনা করেছেন, উল্লেখ করে যে বিহারের জাতিগত জনগণনা মহাগাঠবন্ধন সরকারের আমলে হয়েছিল।
রাহুল গান্ধীর (Rahul-Gandhi) নেতৃত্বে কংগ্রেস বিহারে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ভোট ও সম্মানের উপর জোর দিয়ে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। জাতিগত জনগণনা, সংরক্ষণ, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলটি ইবিসি, দলিত, এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। তবে, বিহারের জটিল জাতভিত্তিক রাজনীতি এবং প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর আধিপত্য এই কৌশলের সাফল্যের পথে চ্যালেঞ্জ। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরের নির্বাচনে কংগ্রেসের এই প্রচেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সময়ই বলবে।