মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও মণিপুরের নির্বাচনে মুখে কুলুপ মোদীর-কটাক্ষ রাহুলের

কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) আজ বিহারের ভাগলপুরে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) বিরুদ্ধে তীব্র…

Rahul Gandhi vs modi

কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) আজ বিহারের ভাগলপুরে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, “প্রধানমন্ত্রী আজ বিহারে এসেছিলেন, কিন্তু মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং মণিপুরের নির্বাচনে ঘটে যাওয়া অনিয়ম নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।”

তিনি আরও বলেন, “সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকারের গ্যারান্টি দেয়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাচন কমিশন মিলে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছেন।” রাহুল গান্ধী তাঁর ‘ভোটাধিকার যাত্রা’র অংশ হিসেবে এই সভায় বক্তৃতা দেন, যেখানে তিনি বিহারে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।

   

ভাগলপুরের সুয়ারা হাওয়াই অড্ডা ময়দানে আয়োজিত এই জনসভায় রাহুল গান্ধী বলেন, “মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকের নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বিজেপির সঙ্গে মিলে এই ‘ভোট চুরি’র ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।” তিনি দাবি করেন, মহারাষ্ট্রে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে মাত্র পাঁচ মাসে এক কোটি নতুন ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে, যা অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক।

তিনি বলেন, “এই নতুন ভোটাররা যেন সবাই বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছে। এটা কি সম্ভব? এটা স্পষ্টতই নির্বাচনী কারচুপি।” তিনি কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আমরা সেখানে ১ লক্ষের বেশি জাল ভোটার শনাক্ত করেছি, যার মধ্যে ডুপ্লিকেট ভোটার, ভুয়ো ঠিকানা এবং একই ঠিকানায় একাধিক ভোটারের নাম ছিল।”

রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই দরিদ্র, সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের। তিনি বলেন, “এই প্রক্রিয়া দরিদ্র মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার একটি ষড়যন্ত্র।

প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে কোনো কথা বলছেন না, কারণ তিনি এই কারচুপির পৃষ্ঠপোষক।” তিনি আরও বলেন, “বিহারে আমরা এই ভোট চুরি বন্ধ করব। জনগণের ভোটাধিকার আমরা রক্ষা করব।”

রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “নির্বাচন কমিশন মেশিন-পাঠযোগ্য ভোটার তালিকা এবং সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করতে অস্বীকার করেছে। এটা তাদের বিজেপির সঙ্গে সহযোগিতার প্রমাণ।” তিনি দাবি করেন, বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাল ভোটার যুক্ত করা হচ্ছে এবং প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।

Advertisements

তিনি বলেন, “এটা শুধু বিহারে নয়, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং মণিপুরেও হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের বিরুদ্ধে অপরাধ করছে।” তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “আপনি বিহারে এসেছেন, কিন্তু এই অনিয়ম নিয়ে একটি কথাও বলেননি। আপনার নীরবতা আপনার সম্মতির প্রমাণ।”

রাহুল গান্ধীর ‘ভোটাধিকার যাত্রা’ বিহারের ২০টিরও বেশি জেলা জুড়ে ১৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করছে, যা ১ সেপ্টেম্বর পাটনায় একটি বড় সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে। এই যাত্রায় তাঁর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব, সিপিআই(এমএল)-এর দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এবং অন্যান্য ইন্ডিয়া জোটের নেতারা যোগ দিয়েছেন। তেজস্বী যাদব বলেন, “বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন মিলে বিহারের নির্বাচন চুরি করার চেষ্টা করছে। আমরা এটা হতে দেব না।”

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে এই অভিযোগ সমর্থন করে বলেন, “নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ট হয়ে কাজ করছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।” তিনি আরও বলেন, “বিহারের জনগণ এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।”

বিজেপি নেতারা রাহুল গান্ধীর অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, “রাহুল গান্ধী এবং তাঁর দল নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করছে।” তিনি বলেন, “মহারাষ্ট্রে ইন্ডিয়া জোট যখন লোকসভায় জিতেছিল, তখন তারা খুশি ছিল। এখন হেরে গিয়ে তারা নির্বাচন কমিশনের উপর দোষ চাপাচ্ছে।”

‘আন্ডারডগ’ ট্যাগেই বাজিমাত! ডুরান্ড ফাইনালে আগে বড় বার্তা কিবুর

নির্বাচন কমিশনও রাহুলের অভিযোগের জবাবে বলেছে, তিনি যদি তাঁর দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে না পারেন, তবে তাঁকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তারা বলেছে, এসআইআর প্রক্রিয়া ভোটার তালিকার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়।