‘পাপ্পু’ থেকে তিনিই এখন কংগ্রেসের দিশারী! সংসদে ম্যাজিক দেখানোর অপেক্ষায় রাহুল গান্ধী?

   আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ তিনি ইদানীং মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি রাখেন। আগের চেয়ে মেপে কথা বলেন। বলা যেতেই পারে যে তিনি এখন অনেক পরিণত হয়েছেন। তবুও…

rahul gandhi
  

আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ তিনি ইদানীং মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি রাখেন। আগের চেয়ে মেপে কথা বলেন। বলা যেতেই পারে যে তিনি এখন অনেক পরিণত হয়েছেন। তবুও দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য এখনও কতটা যুক্তিযুক্ত সেই নিয়েই তর্ক হতে পারে বিস্তর। তবুও এই পরীক্ষায় যারা ভেবেছিল রাহুল গান্ধী ফেল করবে, তাঁদের কিন্তু মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কারণ রাহুল লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করেছে। শুধু তাই নয়, রাহুল কংগ্রেসকে আবার জীবন দিয়েছে। গত কয়েক বছরে তিনি মাটির কাছাকাছি নেমে এসেছেন। সেটা প্রচারের স্বার্থেই হোক কিংবা সংবাদমাধ্যমের প্রথম পেজে স্টোরি করার জন্যই হোক, রাহুল গান্ধী বদলে গিয়েছেন। আগের ‘পাপ্পু’ আর তিনি নেই! তিনি এখন একটা দলের বোঝা কাঁধে টানার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হয়েছে।

২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে কংগ্রেস মাত্র ৪৪টি আসন জিতেছিল। এরপরে ২০১৯ সালে কংগ্রেস ৫২টি আসন পেয়ে প্রায় দেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার জোগাড়! ঠিক সেই সময় থেকেই চরম হাসির পাত্র হয়ে পড়েন রাহুল। সমাজমাধ্যমে প্রতিনিয়ত তাঁকে নিয়ে মিম আর ভিডিওর বন্যা বয়ে যেতে শুরু করে। তাঁর থেকে একটা সময় মুখ ফিরিয়ে নেয় কংগ্রেসই! নিজের ঘরেই বেমালুম ঘর ছাড়া হয়ে পড়েন রাহুল। তারপরে কেটে গিয়েছে অনেক কয়েকটা বছর। রাহুলের ঘোরতর প্রত্যাবর্তন হয়েছে। তিনি এখন মেপে চলেন। ভোটের ফলাফল বেরনোর পরে তাঁর প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে বেশ পরিণত বলেই মনে হয়েছে। গায়ে সাদা শার্ট, হাতে সংবিধান। মেপে কথা বললেন। কেউ একটাও মিম বানালো না। অন্তত দু’একটা কটূ কথাও ধেয়ে এল না। তাঁর হাতেই কি কংগ্রেসেই ফিরে আসা ?

   

তাঁর হাত ধরেই কি একটা মহাকাব্য রচিত হবে আগামী লোকসভায় ? গান্ধী পরিবার আবার একজন প্রধানমন্ত্রী পাবে ? ভারতে কি রচিত হবে রাহুল যুগ ? উত্তর পাওয়া যেতে পারে ২০২৯এর লোকসভা ভোটে। তবে এই ২০২৪ লোকসভা ভোট তাঁকে বদলে দিয়েছে। এই লোকসভা ভোটে একবারে জন্যই তিনি ঘৃণা ভাষণের ভরসা নেননি। ভালবাসা দিয়ে ভোট চেয়েছেন। একটা নতুন ভারত লক্ষ্যে অগ্রসর হয়েছেন। যে মানুষটা একটা সময়ে কংগ্রেসের অন্দরেই দম বন্ধ হয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তিনি এখন বেঁচে উঠেছেন শুধু তাই নয় উদ্ধার করেছেন কংগ্রেসকে, যে কংগ্রেস লোকসভা ২০২৪ সালে ৯৯টি আসন পেয়েছে গোটা দেশে। যা গতবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

মাঝে একটা সময় নিজের সাংসদ পদ খুইয়েছিলেন। হারিয়েছিলেন বাংলো। তবুও তিনি সেইসময়ও নিজের লক্ষ্যেই অবিচল ছিলেন। বিজেপি জাঁতাকলে নিজের সবটুকু বিসর্জন দিয়ে দিতেই পারতেন তবুও তিনি স্থির থেকেছেন। একমনে কাজ করে গিয়েছেন। আবার জীবন দিয়েছেন কংগ্রেস এবং নিজেকে। নতুন সাংসদে তিনি কি হূল ফোটাতে পারবেন? আবারও ঘৃণা ভাষণ ছেড়ে শুধুমাত্র ভালবাসা দিয়ে আঁকড়ে ধরতে পারবেন ভারতকে, ২০২৯-এর লক্ষ্যে কি ফের অবিচল থাকবেন রাহুল? সময়ই কথা বলবে।

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে দেশে প্রধানমন্ত্রীর স্ট্রাইক রেট ছিল ৮৫ শতাংশ। অর্থাৎ যে যে লোকসভা কেন্দ্রে তিনি জনসভা করেছেন, তার ৮৫ শতাংশ গিয়েছিল বিজেপির দখলে। ২০২৪-এ এসে সেই স্ট্রাইক রেটই নেমে এল ৫৬ শতাংশে। অর্থাৎ যে যে কেন্দ্রে প্রচারে জোর দিয়েছেন মোদি সেগুলির মধ্যে ৪৪ শতাংশে হারতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। অন্যদিকে ২০১৯-এ রাহুল গান্ধী যেখানে ২০ শতাংশেরও কম সেখানে এবার ৪৮ শতাংশ স্ট্রাইক রেটে আসন জিতিয়েছেন তিনি। এটা কম কি? তিনি গণদেবতার বিরুদ্ধে লড়েছেন! মাথা উঁচু করে লড়ে গিয়েছেন শুধু। হয়ে ওঠার সাধানায় ব্যপ্ত থেকেছেন। হয়ে ওঠার পরেও তিনি হয়ে ওঠার সাধনাতেই নিমজ্জিত রেখেছেন নিজেকে।

তিনি যখন থেকে ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেছিলেন, তখন থেকেই তিনি খানিক বদলে গিয়েছেন। যত জনগণের সঙ্গে মিশেছেন তত তাঁর ভাবভঙ্গি পাল্টেছে। দাড়ি বেড়েছে। চেহারাও বদলেছে। ভারতের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত তিনি হেঁটে গিয়েছেন। হাত মিলিয়েছেন বহুজনপদের সঙ্গে। ঝড়ে পড়া বরফে ভাষণ দিয়েছেন। তবুও তিনি একটি বারের জন্য হয়ে ওঠার সাধনা থেকে সরে আসেননি। আজ হয়নি তো কী, একদিন হবে। এই নেশায় তিনি লড়ে গিয়েছেন। মেপে চলতে শিখেছেন। ভোটের পরেও একবারের জন্য ক্যামেরার সামনে নিজের বিষণ্ণতা প্রকাশ করেননি, উপরন্তু হাসি মুখে হাত মিলিয়েছেন। তিনি ‘বড়’ হয়ে উঠেছেন ।