লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) ওডিশার বিজেপি সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন ওডিশা সরকার আদানি গোষ্ঠীর হাতে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “আদানি ওডিশা সরকার চালায়, আদানি নরেন্দ্র মোদীকে চালায়। যখন ওডিশায় জগন্নাথ যাত্রার রথ টানা হয়, লক্ষ লক্ষ মানুষ তা প্রত্যক্ষ করেন।
তখন একটি নাটক ঘটে—রথগুলো আদানি ও তার পরিবারের জন্য থামিয়ে দেওয়া হয়। এটি আপনাকে ওডিশা (Rahul Gandhi) সরকার সম্পর্কে সব বোঝাবে। এটি ওডিশার জনগণের সরকার নয়, এটি আদানির মতো ৫-৬ জন বিলিয়নিয়ারের সরকার। এর উদ্দেশ্য হল আপনার জমি, জঙ্গল এবং ভবিষ্যৎ চুরি করা।” রাহুলের এই মন্তব্য ওডিশার রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
জগন্নাথ যাত্রার ঘটনা ও আদানির প্রভাব
রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) ওডিশার পুরীতে জগন্নাথ যাত্রার সময় রথযাত্রা থামানোর একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই বছরের রথযাত্রার সময় রথগুলো গৌতম আদানি এবং তার পরিবারের জন্য থামানো হয়েছিল, যা ওডিশার শাসনব্যবস্থায় আদানি গোষ্ঠীর প্রভাবের প্রতীক। তিনি বলেন, “লক্ষ লক্ষ ভক্ত যখন জগন্নাথের রথযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন, তখন রথ থামিয়ে আদানির জন্য পথ তৈরি করা হয়।
এটি ওডিশার মানুষের ধর্মীয় আবেগের সঙ্গে খেলা। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, সরকার জনগণের জন্য নয়, কয়েকজন ধনকুবেরের স্বার্থে কাজ করছে।” জগন্নাথ যাত্রা ওডিশার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং এই অভিযোগ রাজ্যের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
আদানির প্রকল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদ
রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) অভিযোগ করেছেন যে, আদানি গোষ্ঠী ওডিশার প্রাকৃতিক সম্পদ, জমি এবং জঙ্গল দখলের পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, “ওডিশার জনগণের জমি, জঙ্গল এবং ভবিষ্যৎ আদানির মতো বিলিয়নিয়ারদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই সরকার জনগণের নয়, ৫-৬ জন ধনকুবেরের স্বার্থ রক্ষা করছে।”
তিনি উল্লেখ করেছেন, আদানি গোষ্ঠী ওডিশায় খনিজ সম্পদ, বন্দর এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বড় প্রকল্পে জড়িত। এই প্রকল্পগুলোর জন্য স্থানীয় আদিবাসী এবং কৃষক সম্প্রদায়ের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, যা তাদের জীবিকার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, “এই প্রকল্পগুলো স্থানীয় মানুষের উন্নয়নের জন্য নয়, বরং বড় শিল্পপতিদের লাভের জন্য।”
বিজেপির প্রতিক্রিয়া (Rahul Gandhi)
রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) এই মন্তব্যের জবাবে বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেছেন, “রাহুল গান্ধী মিথ্যা অভিযোগ করে ওডিশার মানুষের আবেগ নিয়ে খেলছেন। জগন্নাথ যাত্রা একটি পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান, এবং এটিকে রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো কংগ্রেসের নীচু মানসিকতার পরিচয়।”
তিনি দাবি করেছেন, ওডিশার বিজেপি সরকার জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে এবং আদানির মতো শিল্পপতিদের সঙ্গে সহযোগিতা রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। তিনি আরও বলেন, “রাহুল গান্ধী উন্নয়নের বিরোধিতা করছেন, কারণ কংগ্রেসের কাছে ওডিশার জনগণের জন্য কোনো দৃষ্টিভঙ্গি নেই।”
ওডিশার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ওডিশায় বিজেপি সম্প্রতি ক্ষমতায় এসেছে, এবং মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি রাজ্যের উন্নয়নের জন্য একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। তবে, রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, এই প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই বড় শিল্পপতিদের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “ওডিশার জনগণের জন্য প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে না।
জমি অধিগ্রহণের নামে স্থানীয় মানুষকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, এবং তাদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।” তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, আদানি গোষ্ঠীর প্রকল্পগুলোর জন্য আদিবাসী এবং কৃষক সম্প্রদায়ের জমি অধিগ্রহণের ফলে অনেকে তাদের জীবিকা হারাচ্ছেন।
জনগণের প্রতিক্রিয়া এবং সামাজিক মাধ্যম
রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে তাঁর অভিযোগের সমর্থন করে বলেছেন, বিজেপি সরকার বড় শিল্পপতিদের স্বার্থে কাজ করছে, যা স্থানীয় জনগণের ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
তবে, বিজেপি সমর্থকরা এই অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক প্রচারণা’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “রাহুল গান্ধী জগন্নাথ যাত্রার মতো পবিত্র অনুষ্ঠানকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ওডিশার জনগণের আবেগের অপমান করছেন।”
কংগ্রেসের রাজনৈতিক কৌশল
রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্য কংগ্রেসের ওডিশায় রাজনৈতিক প্রভাব ফিরিয়ে আনার কৌশলের অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ওডিশায় বিজেডি এবং বিজেপির মধ্যে প্রতিযোগিতা চললেও, কংগ্রেস রাজ্যে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
রাহুলের এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জাগানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “আমরা ওডিশার জনগণের পাশে আছি। তাদের জমি, জঙ্গল এবং ভবিষ্যৎ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।”
রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্য ওডিশার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। জগন্নাথ যাত্রার মতো একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁর অভিযোগ বিজেপি সরকারের শাসনব্যবস্থা এবং আদানি গোষ্ঠীর প্রভাব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
ই-ফাইলিং সহজ করতে শুরু হয়ে গেল ITR-2 ও ITR-3 ফাইলিং, জেনে নিন পদ্ধতি
এই ঘটনা কেবল রাজনৈতিক বিতর্কই নয়, বরং ওডিশার জনগণের জমি, সম্পদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার বিষয়টিকেও সামনে এনেছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কীভাবে রাজ্যের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে, তা দেখার বিষয়।