মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিজের সফরের সময়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন প্রসিকিউটরদের পক্ষ থেকে আনা ঘুষের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। শুক্রবার, যখন তাকে প্রশ্ন করা হয় যে এই বিষয়টি কি তার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে আলোচনার বিষয় ছিল, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই সম্ভাবনা সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দেন।
মিডিয়ার কাছে উত্তর দিয়ে মোদী বলেন, “ভারত একটি গণতন্ত্র এবং আমাদের সংস্কৃতি হলো ‘বাসুধৈব কুটুম্বকম’, আমরা পুরো পৃথিবীকে এক পরিবার হিসেবে দেখি। আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি ভারতীয় আমার নিজের। তবে, দুটি রাষ্ট্রের প্রধান কখনোই এমন ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন না।”
প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর কাছে ভালোভাবে গৃহীত হয়নি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নীরবতায় সমালোচনা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় গিয়ে, লোকসভার বিরোধী দলের নেতা লিখেছেন, “যদি দেশে প্রশ্ন করা হয়, তবে নীরবতা। কিন্তু বিদেশে প্রশ্ন করা হলে, সেটি হয়ে যায় একটি ‘ব্যক্তিগত বিষয়’! আমেরিকাতেও মোদীজি আদানি’জির দুর্নীতি আড়াল করলেন! যখন একজন বন্ধুর পকেট ভরা হলো ‘দেশ নির্মাণ’ হিসেবে, তখন দুর্নীতি এবং দেশের সম্পদ লুট করা হয়ে দাঁড়ায় ‘ব্যক্তিগত বিষয়’।”
देश में सवाल पूछो तो चुप्पी,
विदेश में पूछो तो निजी मामला!अमेरिका में भी मोदी जी ने अडानी जी के भ्रष्टाचार पर पर्दा डाल दिया!
जब मित्र का जेब भरना मोदी जी के लिए “राष्ट्र निर्माण” है, तब रिश्वतखोरी और देश की संपत्ति को लूटना “व्यक्तिगत मामला” बन जाता है।
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) February 14, 2025
রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে, এবং দেশের জনগণের স্বার্থের প্রতি অসংবেদনশীলতার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
আদানির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা নভেম্বর মাসে যে অভিযোগ করেছেন, তাতে বলা হয়েছে গৌতম আদানি ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ২৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঘুষ প্রদান করেছেন এবং মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রতারণা করেছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এই ব্যবসায়ী একটি স্কিমের অংশ ছিলেন যাতে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে সৌর শক্তি চুক্তির জন্য সুবিধা পাওয়ার বিনিময়ে শত শত মিলিয়ন ডলারের ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। এই তথ্য মার্কিন ব্যাংক এবং বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে গোপন রাখা হয়েছিল, যারা আদানি গ্রুপের জন্য প্রকল্পটি অর্থায়ন করেছিল। তবে, আদানি গ্রুপ এই অভিযোগগুলো সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে।
এদিকে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্কও দৃঢ় হয়ে উঠেছে। মোদী এবং ট্রাম্প সম্প্রতি এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেন, যেখানে উল্লেখ করা হয় যে দুই দেশ একটি বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তির প্রথম পর্ব এই বছরই চূড়ান্ত করবে এবং তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্কের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার জানিয়েছেন যে ভারতের প্রধান উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক স্তরে শান্তি এবং সহযোগিতা বজায় রাখা। তবে আদানি নিয়ে মিডিয়ায় প্রশ্ন ওঠা, এবং প্রধানমন্ত্রী তার বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে কোনও আলোচনা না হওয়ার কথা জানানো, তা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ব্যবসায়ী বিশ্বের কাছে কিছুটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
মোদী এবং ট্রাম্পের মধ্যে হওয়া আলোচনা দেশের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের দিকে ইঙ্গিত দেয়, কিন্তু আদানি নিয়ে প্রশ্নের উপর প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছে বিতর্কিত হয়েছে। এই ইস্যু আগামী দিনে আরও চর্চিত হতে পারে, বিশেষ করে যদি আমেরিকা থেকে আদানি সংক্রান্ত নতুন তথ্য বা পদক্ষেপ আসে।