কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বারবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরবতার জন্য তীব্র সমালোচনা করেছেন। রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, ট্রাম্প গত ৭৩ দিনে ২৫ বার দাবি করেছেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটিয়েছেন।
তবে, প্রধানমন্ত্রী মোদী এই বিষয়ে একবারও কোনও মন্তব্য করেননি। এই নীরবতাকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে গুরুতর বলে অভিহিত করেছেন রাহুল।রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, “ট্রাম্প ২৫ বার বলেছেন যে তিনি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী একবারও এর জবাব দেননি। তিনি কী বলবেন? ট্রাম্পই যুদ্ধবিরতি করিয়েছেন? এটা বলা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়, কিন্তু এটাই সত্য। সারা বিশ্ব জানে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেছেন। বাস্তবতা থেকে আমরা পালাতে পারি না।”
তিনি আরও বলেন, “এটা শুধু যুদ্ধবিরতির বিষয় নয়। প্রতিরক্ষা, প্রতিরক্ষা উৎপাদন এবং অপারেশন সিন্দুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা সংসদে আলোচনা চাই। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়, এটা সবাই জানে।”
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশও এই বিষয়ে মোদী সরকারের নীরবতার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প গত ৭৩ দিনে ২৫ বার যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব দাবি করেছেন। কিন্তু মোদী সরকার পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা এবং অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদে আলোচনার জন্য কোনও নির্দিষ্ট তারিখ দিতে অস্বীকার করছে। প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে অস্থিতিশীল করার জন্য সময় পেলেও এই বিষয়ে মুখ খোলেননি।”
এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে অপারেশন সিঁদুর, যা ভারত ৭ মে থেকে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি শিবিরের বিরুদ্ধে শুরু করেছিল। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি বাণিজ্যের হুমকি দিয়ে এই সংঘাত বন্ধ করেছেন এবং এমনকি বলেছেন, “পাঁচটি জঙ্গি বিমান ভূপাতিত হয়েছিল।” এই বক্তব্যের পর রাহুল গান্ধী সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, “মোদীজি, পাঁচটি বিমানের সত্যিটা কী? দেশের জনগণের জানার অধিকার রয়েছে!”
প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর সরকার এই বিষয়ে নীরব থাকলেও, সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনায় বাণিজ্যের কোনও উল্লেখ ছিল না। মোদী ১৮ জুন বলেছিলেন, ভারত কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা গ্রহণ করবে না। তবে, ট্রাম্পের বারবার দাবি এবং মোদীর নীরবতা বিতর্ককে আরও জটিল করেছে।
রাহুল গান্ধী আরও বলেন, “যাঁরা নিজেদের দেশভক্ত বলেন, তাঁরা আলোচনা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ট্রাম্পের দাবি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। আমাদের বিদেশনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ গুটিকয়েক দেশই আমাদের সমর্থন করে।” তিনি সংসদে এই বিষয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন।
বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালবিয়া রাহুলের সমালোচনার জবাবে বলেন, “রাহুল গান্ধীর মানসিকতা দেশদ্রোহীর মতো। ট্রাম্প কখনও বলেননি যে পাঁচটি বিমান ভারতের ছিল। তাহলে রাহুল কেন ধরে নিলেন এগুলো ভারতের? তাঁর কি পাকিস্তানের প্রতি বেশি সহানুভূতি?”
বিদেশি বিনিয়োগ নীতির বিরোধিতায় মাইন্ট্রা! ইডির কড়া তদন্ত
এই ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেস দাবি করছে, মোদীর নীরবতা জাতীয় সম্মানের সঙ্গে আপসের ইঙ্গিত দেয়। পহেলগাঁও হামলা এবং অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি জোরালো হচ্ছে। জনগণ এখন অপেক্ষায়, প্রধানমন্ত্রী কখন এই বিষয়ে মুখ খুলবেন।