বিজেপির বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধীর ভোটার অধিকার যাত্রা শুরু বিহারে

বিহার থেকে রবিবার শুরু হচ্ছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) নতুন রাজনৈতিক কর্মসূচি— ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ (Voter Adhikar Yatra)। সাসারাম থেকে যাত্রার সূচনা করে…

Rahul Gandhi

বিহার থেকে রবিবার শুরু হচ্ছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) নতুন রাজনৈতিক কর্মসূচি— ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ (Voter Adhikar Yatra)। সাসারাম থেকে যাত্রার সূচনা করে আগামী ১৬ দিনে প্রায় ২০টিরও বেশি জেলা অতিক্রম করবেন রাহুল গান্ধী, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এবং মহাগঠবন্ধনের (INDIA Bloc) অন্যান্য নেতারা। প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই যাত্রার শেষ হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর পাটনায় এক বিশাল জনসভা দিয়ে।

রাহুল গান্ধী নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় (X-এ) ঘোষণা করেছেন, “১৬ দিন, ২০টিরও বেশি জেলা, ১৩০০ কিলোমিটার— আমরা আসছি মানুষের মধ্যে ভোটার অধিকার যাত্রা নিয়ে। এটা আমাদের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় অধিকার— ‘একজন ব্যক্তি, একটি ভোট’ রক্ষার লড়াই।”

   

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই যাত্রা মূলত দেশের গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন। রাহুল গান্ধী আহ্বান জানিয়েছেন— “সংবিধান বাঁচাতে আমাদের সঙ্গে বিহারে যোগ দিন।” কংগ্রেস নেতা পাওয়ান খেরা দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “যখনই রাহুলজি কোনও যাত্রায় বেরিয়েছেন, তখনই দেশের গণতন্ত্রে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। ভোটার অধিকার যাত্রাও তেমনই একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হতে চলেছে।”

পাওয়ান খেরার অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনকে বিজেপি-র তথাকথিত “ডাবল ইঞ্জিন” সরকারের হাতিয়ার বানানো হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, বিহারে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে সাধারণ ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। কংগ্রেসের মতে, এই ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য হল দলিত, সংখ্যালঘু, বঞ্চিত ও প্রান্তিক মানুষের ভোটাধিকার খর্ব করা।

খেরা বলেন, “ভোট চুরি শুধু ভোট কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র নয়, এটা আসলে আমাদের পরিচয় কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র। আজ ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে দলিত, সংখ্যালঘু, বঞ্চিতদের কাছ থেকে— কাল তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণও কেড়ে নেওয়া হবে।”

এই যাত্রা নিয়ে মহাগঠবন্ধনের সমস্ত শরিক দল একজোট হয়েছে। সূত্রের খবর, যাত্রাপথে একাধিক জেলা শহরে জনসভা ও পদযাত্রা হবে। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবও শুরু থেকেই রাহুল গান্ধীর পাশে থেকে এই কর্মসূচিকে সফল করতে চাইছেন।

Advertisements

যাত্রাটি সাসারাম থেকে শুরু হয়ে অরঙ্গাবাদ, গয়া, নওয়াদা, নালন্দা, শেখপুরা, লখীসারাই, মুঙ্গের, ভাগলপুর, কাটিহার, পূর্ণিয়া, আরারিয়া, সুপৌল, মধুবনী, দরভাঙ্গা, সীতামঢ়ি, পূর্ব চম্পারণ, পশ্চিম চম্পারণ, গোपालগঞ্জ, সিওয়ান, ছপরা এবং আড়া হয়ে শেষ হবে পাটনায়।

বিহারেই আগামী বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। তার আগে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়াকে ঘিরে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তার জেরেই এই যাত্রার পরিকল্পনা। কংগ্রেস নেতৃত্বের বিশ্বাস, এই কর্মসূচি শুধু ভোটাধিকার রক্ষার লড়াই নয়, বরং বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনেরও অন্যতম হাতিয়ার।

পাওয়ান খেরা আরও দাবি করেছেন, “ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম জুড়ে দেওয়া এবং প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনায় বিজেপির ভূমিকা ফাঁস হয়ে গেছে। এখন সাধারণ মানুষও এর প্রমাণ দিচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টকেও শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।”

রাহুল গান্ধীর এই ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ নিছক একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে মহাগঠবন্ধনের কৌশলগত উদ্যোগ। ১৬ দিনের এই দীর্ঘ সফরে বিহারের জনমানসে কতটা প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবেন রাহুল গান্ধী— সেটাই এখন দেখার বিষয়।