লোকসভা নির্বাচনের পরে ইন্ডিয়া জোট কার্যত অচলাবস্থায় পৌঁছেছিল। কিন্তু সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রাক্কালে ফের একবার বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। সেই প্রয়াসেরই অঙ্গ হিসেবে আজ, বুধবার তাঁর নয়া দিল্লির বাসভবনে আয়োজন করা হয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈশভোজ বৈঠকের। এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ইন্ডিয়া জোটের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দলগুলিকে।
বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, তিনি আজকের এই নৈশভোজে উপস্থিত থাকতে পারেন। লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার অন্যতম মুখ ছিলেন অভিষেক। ভোট-পরবর্তী সময়েও তাঁকে সামনে রেখেই পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক দলগুলিকে পাশে পাওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে কংগ্রেস নেতৃত্ব।
বৈঠকের মূল এজেন্ডা কী কী?
এই নৈশভোজ শুধু রাজনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্র হিসেবেই চিহ্নিত হচ্ছে। বৈঠকে মোট তিনটি বিষয় প্রাধান্য পাবে বলে সূত্রের খবর:
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন:
জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগের পর উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়েছে। বিরোধী জোটের তরফে কাকে প্রার্থী করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে আজকের বৈঠকে। একটি গ্রহণযোগ্য, সর্বদলীয় সমর্থনযোগ্য মুখ খুঁজে বের করাই হবে রাহুল গান্ধীর অন্যতম লক্ষ্য।
এসআইআর (SIR) নিয়ে সংসদ ও রাজপথে কৌশল:
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে কেন্দ্রের ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (SIR) প্রকল্পকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা এই প্রকল্পকে ভোটারদের হয়রানি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছে। আজকের বৈঠকে ঠিক হবে, সংসদে ও রাজপথে এই ইস্যুতে বিরোধীরা কেমনভাবে ফ্লোর কোঅর্ডিনেশন করবে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবে।
নির্বাচন কমিশন অভিযান:
আগামী ১১ অগস্ট নির্বাচন কমিশনের সামনে বিরোধীদের একটি যৌথ কর্মসূচি রয়েছে। সেখানকার রূপরেখা, স্লোগান, মুখ্য মুখ, ও মিডিয়া পরিকল্পনা নিয়েও আজকের এই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
রাহুল গান্ধীকে সামনে রেখে বিরোধী ঐক্যের ভাবমূর্তি গড়ে তোলার পরিকল্পনায় কংগ্রেস আবারও সক্রিয় হয়েছে। বিশেষত, বিহার বিধানসভা নির্বাচনকে টার্গেট করেই ইন্ডিয়া জোটকে নতুন করে চাঙ্গা করতে চাইছে দল। বিহারে আরজেডি, কংগ্রেস, এবং অন্যান্য বাম দলগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার পাশাপাশি, তৃণমূল-সিপিএম-ডিএমকে-আপ-এর মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলির সহানুভূতিও বজায় রাখতে চায় কংগ্রেস।
আজকের এই বৈঠকে অংশ নেওয়া সমস্ত নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতার মাধ্যমে ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোও একটি গোপন উদ্দেশ্য বলে মনে করা হচ্ছে। বিরোধী ঐক্যে নতুন গতি আনতেই রাহুলের এই ডিনার কূটনীতি, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
আজকের এই বৈঠক ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ স্থির করতে পারে। উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হোক বা এসআইআর ইস্যুতে যৌথ আন্দোলন—বিরোধী ঐক্য মজবুত করার জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।