নির্বাচন কমিশন বিরোধী মিছিলে দিল্লি পুলিশের হাতে আটক রাহুল গান্ধী

সোমবার সংসদের মকর দ্বার থেকে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের দিকে বিরোধী (Rahul Gandhi)দলের সাংসদদের একটি বিক্ষোভ মিছিলের সময় কংগ্রেস নেতা ও লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল…

Rahul Gandhi detained

সোমবার সংসদের মকর দ্বার থেকে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের দিকে বিরোধী (Rahul Gandhi)দলের সাংসদদের একটি বিক্ষোভ মিছিলের সময় কংগ্রেস নেতা ও লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী সহ একাধিক ইন্ডিয়া ব্লকের নেতাকে দিল্লি পুলিশ আটক করেছে। এই মিছিলের উদ্দেশ্য ছিল বিহারে চলতে থাকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কথিত “ভোট চুরি”র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো।

   

মিছিলটি ট্রান্সপোর্ট ভবনের কাছে পৌঁছানোর পর পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়, এবং রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা, সঞ্জয় রাউত, এবং সাগরিকা ঘোষ সহ বেশ কয়েকজন নেতাকে আটক করা হয়। এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

মিছিলের পটভূমি ও নেতৃত্ব

রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে প্রায় ৩০০ জন সাংসদ এই মিছিলে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ও’ব্রায়েন ও মহুয়া মৈত্র, ডিএমকে’র টি আর বালু, শিবসেনা (ইউবিটি)’র সঞ্জয় রাউত, এবং আরজেডি, সিপিআই, সিপিএম, এনসিপি (এসপি) এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাংসদরা।

মিছিল শুরুর আগে সাংসদরা মকর দ্বারে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে তাদের প্রতিবাদ শুরু করেন। এই মিছিলের মাধ্যমে বিরোধীরা নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

প্রতিবাদের কারণ

বিরোধী দলগুলি বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, যা তাদের মতে ভোটার তালিকায় কারচুপির মাধ্যমে ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা। রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ১,০০,০০০ ভোট “চুরি” হয়েছে।

তিনি দাবি করেছেন, একজন ব্যক্তির নাম একাধিক ভোটকেন্দ্রে তালিকাভুক্ত ছিল, এবং ভোটার তালিকার ডিজিটাল ডেটা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। রাহুল গান্ধী বলেন, “এই লড়াই রাজনৈতিক নয়, এটি সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। এটি এক ব্যক্তি, এক ভোটের লড়াই। আমরা একটি পরিষ্কার, নির্ভেজাল ভোটার তালিকা চাই।”

দিল্লি পুলিশের হস্তক্ষেপ

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, মিছিলের জন্য কোনও আনুষ্ঠানিক অনুমতি নেওয়া হয়নি। ট্রান্সপোর্ট ভবনের কাছে পুলিশ ব্যারিকেড স্থাপন করে মিছিল আটকে দেয়। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, মহুয়া মৈত্র, এবং সুষ্মিতা দেব সহ কয়েকজন সাংসদ ব্যারিকেড টপকে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

Advertisements

পুলিশ মেগাফোনে ঘোষণা করে সাংসদদের এগিয়ে যেতে বারণ করে। এই সময় প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “ডরে হুয়ে হ্যায়। সরকার কায়ার হ্যায়।” পুলিশের এই হস্তক্ষেপ বিরোধী দলগুলির মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া

নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীর অভিযোগকে “ভুল” বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং তাঁকে কথিত জালিয়াতি ভোটারদের তথ্য শপথপূর্বক জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে, কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশের অনুরোধে কমিশন ৩০ জন সাংসদের সঙ্গে দুপুর ১২টায় সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছে।

রাজনৈতিক প্রভাব

এই ঘটনার জেরে সংসদের উভয় কক্ষ দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতুবি করা হয়। বিরোধী সাংসদরা সংসদে এই বিষয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। মিছিলে সাংসদরা লাল টুপি পরেছিলেন, যাতে লাল ক্রস দিয়ে “এসআইআর” এবং “ভোট চুরি” শব্দ লেখা ছিল। তারা বিভিন্ন ভাষায় পোস্টার বহন করেন, যেখানে লেখা ছিল “এসআইআর + ভোট চুরি = গণতন্ত্রের হত্যা” এবং “এসআইআর – লোকতন্ত্র পর বার”।

ইসরোর নতুন মিশন, আমেরিকার ৬,৫০০ কেজি ওজনের স্যাটেলাইটকে করবে লঞ্চ

জনমত ও প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধী দলগুলি দাবি করছে, সরকার ও নির্বাচন কমিশন মিলে ভোটার তালিকায় কারচুপি করছে। সামাজিক মাধ্যমে বিরোধী নেতারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কংগ্রেসের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, “নরেন্দ্র মোদী পুলিশ লাগিয়ে সাংসদদের হিরাসতে নিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী কিসের ভয়ে আছেন?”

রাহুল গান্ধী সহ ইন্ডিয়া ব্লকের নেতাদের আটকের ঘটনা ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্ককে আরও জোরদার করেছে। এই প্রতিবাদ গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি “এক ব্যক্তি, এক ভোট” নীতির প্রতি বিরোধীদলের অঙ্গীকার প্রকাশ করে। তবে, পুলিশের হস্তক্ষেপ এবং সরকারের নীরবতা এই বিতর্ককে আরও তীব্র করতে পারে।