ভারতের রাজনীতিতে রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) নামটি একসময় তীব্র ব্যঙ্গ আর উপহাসের সমার্থক হয়ে উঠেছিল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাঁকে ‘পাপ্পু’ বলে ডাকত, সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে কৌতুকের বন্যা বইত। কিন্তু গত কয়েক বছরে রাহুলের রাজনৈতিক অবস্থান এবং কৌশলে এক আমূল পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এখন আর তিনি কেবল শোরগোল তোলা বা অভিযোগ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নন। বরং তিনি একের পর এক ইস্যুতে সুস্পষ্ট বক্তব্য রেখে এমন চাপ সৃষ্টি করছেন, যাতে সরকারি সংস্থা থেকে বিচারব্যবস্থা—প্রায় সবকেই সক্রিয় হতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
এক সময় রাহুলকে সহজ করে দেখলেও, তাঁর ধারাবাহিক আন্দোলন এবং প্রকাশ্য অভিযানের ফলে আজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু জনসমক্ষে এসেছে। ভোট চুরি থেকে পরীক্ষা ফাঁস, কৃষক আইন থেকে ইলেক্টোরাল বন্ড—প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাহুলের আক্রমণাত্মক অবস্থান ক্ষমতাসীনদের অস্বস্তিতে ফেলেছে। এর ফলে শুধু সংসদ বা মঞ্চেই নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাঁর বক্তব্য আলোচিত হচ্ছে।
রাহুলের সবচেয়ে বড় শক্তি এখন ইস্যু বেছে নেওয়ার ক্ষমতা। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে যুক্ত এমন ইস্যুতে তিনি সরাসরি আঘাত করছেন। যেমন, নির্বাচন চলাকালীন ভোটচুরির অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে পরীক্ষা ফাঁসের ঘটনা, কিংবা ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক অর্থায়নের প্রশ্ন—সবক্ষেত্রেই তিনি সরাসরি সরকারের জবাবদিহি চাইছেন। তাঁর এই অবস্থান বিরোধী রাজনীতির নতুন রূপরেখা তৈরি করছে।
কৃষক আন্দোলনের সময় রাহুলের অবস্থান তাঁকে গ্রামীণ ভোটারদের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। কৃষক আইন বাতিলের দাবিতে তিনি একাধিক সমাবেশ করেছেন, সংসদে সরব হয়েছেন, এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। একইভাবে ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে তাঁর ধারাবাহিক সমালোচনা আজ সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত আলোচনায় এসেছে।
আগে রাহুলকে নিয়ে একটি প্রচলিত ধারণা ছিল—তিনি অভিযোগ করেন, কিন্তু পরে সরে যান। এখন সেই ছবি বদলেছে। তিনি ইস্যু উত্থাপন করছেন, প্রমাণ-সহ তুলে ধরছেন এবং শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত চাপ বজায় রাখছেন। ফলে সরকারি সংস্থা থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন বা আদালত—সবাইকে নড়তে হচ্ছে।