বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে (Rahul Gandhi)। সেই উত্তেজনার আগুন উস্কে দিয়ে আবারও বিস্ফোরক মন্তব্য রাহুল গান্ধীর। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে দাবি করেছেন যে, বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে ‘ভোট চুরি’র ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি নির্বাচন কমিশনকে বিজেপির পক্ষে কাজ করা ‘ইলেকশন থেফট ব্রাঞ্চ’ (ভোট চুরির শাখা) হিসেবে অভিহিত করেছেন। বৃহস্পতিবার এক্স-এ একটি পোস্টে রাহুল গান্ধী এক সাংবাদিকের শেয়ার করা ভিডিও প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারি আধিকারিকরা ভোটারদের অজান্তেই তাঁদের ফর্ম ভর্তি করে সই করছেন, যা স্পষ্টতই ভোটার তালিকায় কারচুপির প্রমাণ।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, নির্বাচন কমিশন কি এখনও নিরপেক্ষ সংস্থা হিসেবে কাজ করছে, নাকি এটি পুরোপুরি বিজেপির হাতে চলে গেছে?রাহুল গান্ধী তাঁর এক্স পোস্টে লিখেছেন, “বিহারে নির্বাচন কমিশনকে ‘এসআইআর’ (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন)-এর নামে ভোট চুরি করতে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। তাদের কাজ এখন শুধু চুরি, নাম দেওয়া হয়েছে ‘এসআইআর’।
যাঁরা এই চুরি উন্মোচন করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে! নির্বাচন কমিশন কি এখনও ‘ইলেকশন কমিশন’, নাকি এটি পুরোপুরি বিজেপির ‘ইলেকশন থেফট ব্রাঞ্চ’ হয়ে গেছে?”ভোটার তালিকা সংশোধন ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশবিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে।
গত ১০ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। তবে, বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে যে, ভোটার পরিচয় প্রমাণের জন্য আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার আইডি কার্ডের মতো নথিগুলি গ্রহণের বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে। আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে, “ন্যায়বিচারের স্বার্থে, নির্বাচন কমিশনের উচিত আধার, রেশন কার্ড, ভোটার আইডি কার্ডের মতো নথি গ্রহণ করা।
কমিশন যদি এই নথি গ্রহণ না করে, তবে তার যথাযথ কারণ দিতে হবে, যা আবেদনকারীদের সন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট হবে।” আদালত আরও জানিয়েছে, আবেদনকারীরা এই প্রক্রিয়ার উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের দাবি তুলছেন না।নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিহারে ৮০.১১ শতাংশ ভোটার তাঁদের ফর্ম জমা দিয়েছেন। ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে এনুমারেশন ফর্ম (ইএফ) সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কমিশন দ্রুত এগোচ্ছে। তবে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই রাহুল গান্ধীর অভিযোগ নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
বিহারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বিহারের বিধানসভা নির্বাচন এই বছরের অক্টোবর বা নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও নির্বাচন কমিশন এখনও সরকারি তারিখ ঘোষণা করেনি। বর্তমানে ২৪৩ সদস্যের বিহার বিধানসভায় জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)-এর ১৩১ জন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে বিজেপির ৮০ জন, জেডি(ইউ)-এর ৪৫ জন, এইচএএম(এস)-এর ৪ জন এবং দুজন নির্দল বিধায়কের সমর্থন রয়েছে।
অন্যদিকে, বিরোধী ইন্ডিয়া জোটে ১১১ জন সদস্য রয়েছেন, যার মধ্যে আরজেডি-র ৭৭ জন, কংগ্রেসের ১৯ জন, সিপিআই(এমএল)-এর ১১ জন, সিপিআই(এম)-এর ২ জন এবং সিপিআই-এর ২ জন বিধায়ক রয়েছেন। এনডিএ নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে, আর ইন্ডিয়া জোট তাঁদের ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে প্রচার জোরদার করছে।
রাহুলের অভিযোগে রাজনৈতিক তরজা
রাহুল গান্ধীর এই অভিযোগ বিহারের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি ও জেডি(ইউ) নেতারা এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এক বিজেপি নেতা বলেন, “রাহুল গান্ধী নির্বাচনের আগে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছেন। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা এবং এটি সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে।” জেডি(ইউ) নেতা নীরজ কুমার বলেন, “কংগ্রেস ও আরজেডি নির্বাচনে হারের ভয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।
ভোটার তালিকা সংশোধন একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া।”অন্যদিকে, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবও রাহুলের সমর্থনে সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, “বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার নামে লক্ষ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা বিজেপির ষড়যন্ত্র।” তিনি আরও দাবি করেন, দরিদ্র ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
ভারতে লঞ্চ হল 2025 Aprilia SR 175, দাম মধ্যবিত্তের হাতের নাগালেই
জনমনে উদ্বেগ ও নির্বাচনের প্রভাব
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ এবং ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে বিতর্ক বিহারের জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই প্রক্রিয়ায় তাঁদের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে। বিশেষ করে, প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে এই প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও, নির্বাচন কমিশনের উপর থেকে জনগণের ভরসা কিছুটা হলেও কমেছে।
আগামী নির্বাচনে এই ইস্যু বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। ইন্ডিয়া জোট এই অভিযোগকে কাজে লাগিয়ে জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে, যেখানে এনডিএ দাবি করছে যে, ভোটার তালিকা সংশোধন অবৈধ ভোটারদের বাদ দেওয়ার জন্য জরুরি। তবে, এই বিতর্ক বিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ বিহারের নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ও ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্ক আগামী দিনে আরও তীব্র হতে পারে।