‘শুরু থেকেই ন্যায্য ছিল না নির্বাচন’, বিহার বিপর্যয়ের পর অভিযোগ রাহুলের

Rahul Gandhi Bihar Election Unfair

বিহার বিধানসভা নির্বাচনে মহাজোটের ভরাডুবির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কৃতজ্ঞতা জানালেন সেইসব ভোটারদের, যারা মহাগঠবন্ধনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে একইসঙ্গে স্পষ্ট ভাষায় অভিযোগ করলেন—এই প্রতিযোগিতা শুরু থেকেই “ন্যায্য” ছিল না।
এক্স-এ পোস্ট করে রাহুল লেখেন, “বিহারের লক্ষ লক্ষ মানুষ মহাজোটের প্রতি যে আস্থা দেখিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। এই রায় অত্যন্ত বিস্ময়কর। শুরু থেকেই এই নির্বাচন ন্যায্য ছিল না।”

Advertisements

রাহুলের দাবি, এই ফল শুধু ব্যর্থতার ইঙ্গিত নয়—বরং দলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ইনট্রোস্পেকশনের মুহূর্ত’। তাঁর কথায়, সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই আরও তীব্র হবে; কংগ্রেস ও আইএনডিআইএ জোট ফলাফল খতিয়ে দেখবে এবং সংগ্রামকে আরও ধারালো করবে।

   

ঐতিহাসিক জয়ে এনডিএ, কংগ্রেসের অন্যতম হতশ্রী ফল

নির্বাচনে এনডিএ-র ঐতিহাসিক জয়ের চিত্র আরও স্পষ্ট। বিজেপি–জেডিইউ নেতৃত্বাধীন জোট ২৪৩ আসনের বিধানসভায় ২০২টি আসন দখল করেছে। অন্যদিকে মহাজোট মাত্র ৩৫ আসনে সীমাবদ্ধ।
২০১০–এর পর এ রাজ্যে কংগ্রেসের অন্যতম সবচেয়ে খারাপ ফল—মাত্র ছয়টি আসন।

‘জনতার বিরুদ্ধে জ্ঞানেশ কুমার সফল’, অভিযোগ কংগ্রেসের

কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা আরও তীব্র সুরে বলেন, “প্রাথমিক ট্রেন্ড থেকেই স্পষ্ট—এই লড়াই রাজনৈতিক দলগুলোর নয়। এটি ছিল জ্ঞানেশ কুমার বনাম বিহারের জনগণের লড়াই।”
তিনি দাবি করেন, নির্বাচন প্রক্রিয়াই প্রশ্নের মুখে, আর সেই কারণেই ফলাফল এত একপেশে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে অবশ্য ফলকে সম্মান জানিয়ে বলেন—গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে “অপব্যবহার” করা হচ্ছে, এবং এই লড়াই চলবে। তিনি কর্মীদের মনোবল অটুট রাখার আবেদনও জানান।

দলের ভেতরেই অসন্তোষের সুর—থারুর থেকে জয়রাম, সকলেরই তিরস্কার

শশী থারুর ফলাফলকে সরাসরি “seriously disappointing” বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, শুধু ভাবনার নয়—গভীর ও বিশদ বিশ্লেষণের সময় এসেছে।
তিনি বলেন, “কী ভুল হলো—কৌশলগত, প্রচারের, না সংগঠনের—সবই খতিয়ে দেখতে হবে।”
থারুর জানান, তাঁকে বিহারে প্রচারের জন্য আমন্ত্রণও জানানো হয়নি।

Advertisements

জয়রাম রমেশ আরও সরাসরি অভিযোগ তোলেন—বৃহৎ মাত্রায় “ভোট চুরি” হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “এই ফলাফল স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে—প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে বিশাল পরিসরে কারচুপি হয়েছে।”

‘এ ফল জনগণের ম্যান্ডেট নয়’—প্রিয়াঙ্ক খড়গে

কর্নাটকের মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খড়গে এই ফলাফলকে “অস্বাভাবিক, বিস্ময়কর এবং গ্রহণযোগ্য নয়” বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, মাটির রিপোর্ট একেবারেই এই ফলাফল নির্দেশ করেনি। আবার কংগ্রেস নেত্রী মুমতাজ পাটেল দলের ভেতরের অস্বচ্ছতা ও সংগঠনের দুর্বলতাকেই মুখ্য কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
তাঁর বক্তব্য, “কয়েকজনই সিদ্ধান্ত নেন। যাঁরা লড়াইয়ের মাটিতে কাজ করেন, তাঁদের কেউ জিজ্ঞাসা করে না, গুরুত্বও দেয় না।”
তিনি আরও বলেন—সংগঠন হিসেবে কংগ্রেসকে জনগণের মন ও আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। রাহুল গান্ধী কঠোর পরিশ্রম করছেন, কিন্তু দলের ভেতরকার কিছু মানুষ ক্ষমতার খেলায় তাঁর প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দিচ্ছেন।

টিকিট বণ্টনে দুর্নীতি, AIMIM-এর উত্থান

কংগ্রেসের সাবেক নেতা ও মন্ত্রী শাকিল আহমদ অভিযোগ করেন—টিকিট বণ্টন পর্বেই আর্থিক অনিয়মসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছিল, এবং সেগুলিকেই দলের বড় হারার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা উচিত।
তিনি আরও বলেন, AIMIM-এর একাধিক আসনে এগিয়ে থাকা কংগ্রেসের জন্য “চমকপ্রদ” ও উদ্বেগজনক। সিমাঞ্চলের মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক নিজেদের জয়ের আস্থাতেই অন্য দলকে আটকাতে চেয়েছে—এমনই তাঁর ব্যাখ্যা।

বিহারের রাজনৈতিক ইকোসিস্টেমে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত

এনডিএ-র তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা শুধু নির্বাচনের ফল নয়, এ রাজ্যের সামাজিক–রাজনৈতিক সমীকরণ, সংগঠনিক শক্তি এবং বিরোধী জোটের গভীর দুর্বলতার প্রতীক হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে কংগ্রেস ও মহাজোটের ভরাডুবির পর প্রকাশ্যে আসা দলীয় অসন্তোষ আগামী মাসগুলোতে বিরোধী রাজনীতির ভুবনকে আরও ঝড়ো করতে পারে।