পাকিস্তানে সার্জিকাল স্ট্রাইকের ইঙ্গিত! মোদীর কড়া পদক্ষেপে সায় রাহুলের

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে রবিবার (২০ এপ্রিল, ২০২৫) সংঘটিত ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধী দলগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে…

Rahul Gandhi Backs Government's Response to Pahalgam Terror Attack in All-Party Meet

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে রবিবার (২০ এপ্রিল, ২০২৫) সংঘটিত ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধী দলগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে আয়োজিত সর্বদলীয় বৈঠকের পর লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) বলেন, “সমস্ত রাজনৈতিক দল একযোগে এই হামলার নিন্দা করেছে এবং সরকারের যেকোনো পদক্ষেপের জন্য বিরোধী দলগুলি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।” এই হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, এবং সরকার ইতিমধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে।

   

সর্বদলীয় বৈঠকের বিবরণ

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেন এবং নিরাপত্তা ত্রুটি ও হামলার পটভূমি সম্পর্কে নেতাদের অবহিত করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার সভাপতি জে পি নাড্ডা, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়গে, তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, এআইএমআইএম-এর আসাদুদ্দিন ওয়াইসি, এএপি-র সঞ্জয় সিং, এনসিপি-এসপি-র সুপ্রিয়া সুলে, বিজেডি-র সস্মিত পাত্র, শিবসেনার শ্রীকান্ত শিন্ডে, এসপি-র রাম গোপাল যাদব এবং আরজেডি-র প্রেমচাঁদ গুপ্তা।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বলেন, “আমরা জম্মু ও কাশ্মীরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাই।” রাহুল গান্ধী শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) আন্তনাগ জেলা হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে আছি। দেশের উচিত একত্রিতভাবে এর মোকাবিলা করা। সমস্ত দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।” তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একটি বৈঠকের দাবিও জানিয়েছেন।

পহেলগাঁও হামলার বিবরণ

রবিবার দুপুরে পহেলগাঁওয়ের বাইসারান মেডোজে, যিনি ‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত, লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)-এর পাঁচ থেকে ছয়জন জঙ্গি পর্যটকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এই হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক নিহত হন। নিহতরা ভারতের ১৪টি রাজ্য থেকে এসেছিলেন। এছাড়া, বেশ কয়েকজন আহত হন, যাঁদের আন্তনাগ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সরকারের পদক্ষেপ

হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি (CCS)-এর বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকার হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ঘোষিত পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে:
• সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত: ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি, যা ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালের যুদ্ধের মধ্যেও অক্ষুণ্ণ ছিল, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
• অটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ: পাঞ্জাবের এই গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত চেকপোস্ট বন্ধ করা হয়েছে। বৈধ অনুমোদন নিয়ে পারাপারকারীদের ১ মে, ২০২৫-এর মধ্যে ফিরতে হবে।
• SAARC ভিসা স্কিম বাতিল: পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য SAARC ভিসা ছাড় স্কিম বাতিল করা হয়েছে। ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের ২৯ এপ্রিলের মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে, এমনকি চিকিৎসার জন্য ভিসাধারীদেরও।
• কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস: নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা, নৌ এবং বিমান উপদেষ্টাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতও ইসলামাবাদে নিজেদের সমমানের উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করছে।
• হাইকমিশনের কর্মী হ্রাস: উভয় দেশের হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে ৩০-এ নামিয়ে আনা হবে।

Advertisements

সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা

২০১৬ সালের উড়ি এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) পেরিয়ে জঙ্গি শিবিরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং বিমান হামলা চালিয়েছিল। পহেলগাঁও হামলার পর অনেকে সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে, সরকার বর্তমানে অ-সামরিক পদক্ষেপের উপর জোর দিয়েছে, যার মধ্যে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি অন্যতম।

জনমত ও প্রভাব

পহেলগাঁও হামলা দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সামাজিক মাধ্যমে হামলার নিন্দা এবং সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করা হচ্ছে। তবে, কেউ কেউ সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতকরণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি, কিন্তু জল চুক্তি স্থগিতকরণ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করতে পারে।”

পহেলগাঁওয়ের পর্যটন শিল্পের উপর এই হামলার গভীর প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় হোটেল মালিক এবং দোকানদাররা হামলার প্রতিবাদে মোমবাতি মিছিল করেছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ হামলার নিন্দা করে বলেছেন, এই ঘটনা পর্যটন এবং স্থানীয় অর্থনীতির উপর মারাত্মক আঘাত হানবে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান হামলায় তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং ভারতের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতকরণকে “যুদ্ধের কাজ” হিসেবে আখ্যায়িত করে আইনি পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে। পাকিস্তান ভারতীয় নাগরিকদের জন্য SAARC ভিসা স্কিম বাতিল করেছে এবং ভারতীয় এয়ারলাইন্সের জন্য তাদের আকাশপথ বন্ধ করেছে।

পহেলগাঁও হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে ফাটল ধরিয়েছে। সর্বদলীয় বৈঠক এবং বিরোধী দলগুলির সমর্থন সরকারের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। তবে, সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতকরণ এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা উভয় দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি।