পহেলগাঁও সন্ত্রাস ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষের জেরে মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের হারানো ২২ জন শিশুর পাশে দাঁড়ালেন কংগ্রেস সাংসদ ও বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandh)। এই শিশুদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন তিনি। রাজনৈতিক সৌজন্যের গণ্ডি পেরিয়ে একটি মানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাহুল, যা দেশের রাজনৈতিক পরিসরে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ৭ মে ভারত “অপারেশন সিঁদুর” শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে ধ্বংস করা। এই অপারেশনে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় এবং শতাধিক জঙ্গির মৃত্যু হয়। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ৮-১০ মে পর্যন্ত পুঞ্চ ও অন্যান্য সীমান্তবর্তী এলাকায় গোলাবর্ষণ, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলায় ২৭ জন নিহত হন এবং আহত হন ৭০ জনেরও বেশি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুঞ্চ জেলা, যেখানে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। বহু মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে সরকারি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়।
এই সংঘর্ষের শিকার হয়ে অনাথ হয়ে যাওয়া ২২ জন শিশুর দায়িত্ব নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন রাহুল গান্ধী। জম্মু ও কাশ্মীর কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদের কথায়, এই শিশুদের তালিকা তৈরির জন্য মে মাসে রাহুল গান্ধী পুঞ্চ সফরের সময় নির্দেশ দেন। স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব, সরকারি রেকর্ড এবং মাঠপর্যায়ের সার্ভের মাধ্যমে শিশুদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়। বুধবার থেকেই প্রথম কিস্তির অর্থ দিয়ে এই সাহায্য শুরু হবে। যতদিন না তারা স্নাতক পর্যায়ে পৌঁছায়, ততদিন এই সাহায্য জারি থাকবে।
রাহুল গান্ধী সেই সফরে পুঞ্চের একটি স্কুলও পরিদর্শন করেন। সেখানে শিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে, খেলার কথা বলেন এবং স্কুলে বন্ধু তৈরি করার উৎসাহ দেন। তিনি বলেন, “তোমরা কঠোর পরিশ্রম করো, মনের আনন্দে খেলো, স্কুলে প্রচুর বন্ধু তৈরি করো—এটাই হওয়া উচিত তোমাদের উত্তর।” তাঁর এই বার্তায় স্পষ্ট, আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি মানসিকভাবে শক্ত থাকার বার্তাও দিতে চান তিনি।
এই উদ্যোগ রাজনৈতিক মহলেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিরোধী দলনেতা হয়েও এভাবে সরাসরি দায়িত্ব নেওয়ার ঘটনা বিরল। জম্মু ও কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই সিদ্ধান্ত স্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে। এমন মানবিক পদক্ষেপ কেবল একজন রাজনীতিবিদ নয়, একজন দায়িত্ববান নাগরিকের পরিচায়ক বলেই মনে করছে বিশ্লেষক মহল।
কাশ্মীরের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাস্তবতায় শিশুদের মুখে হাসি ফেরানোর এমন প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। পহেলগাঁও হামলার মতো দুঃসহ ঘটনার পর, শিশুদের নতুন করে বাঁচার আশা দিচ্ছেন রাহুল গান্ধী। ভারত-পাক বিরোধের আবহে, এই রকম মানবিক সিদ্ধান্ত সমাজে নতুন আলো জ্বালাবে, এমনই আশা করা যায়।