দিল্লির সীলামপুরে জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং নরেন্দ্র মোদীকে একসাথে আক্রমণ করলেন কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। তিনি দাবি করেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী উভয়েই জনগণের অধিকার নিয়ে চিন্তিত নন এবং তারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, দলিত, আদিবাসী এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার বঞ্চিত করতে চান।
জাতিগত জনগণনার দাবি
রাহুল গান্ধী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং আপ (আম আদমি পার্টি)-এর জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল কেউই জাতিগত জনগণনার বিষয়ে কথা বলেন না। তারা চায় না যে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, দলিত, আদিবাসী এবং সংখ্যালঘুরা তাদের ন্যায্য অধিকার পাক। আপনাদের উচিত প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে প্রশ্ন তোলা, তারা জাতিগত জনগণনার পক্ষে কি না। এই জনগণনা হলে প্রকৃত তথ্য সামনে আসবে এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষদের জন্য ন্যায্য সুযোগ তৈরি হবে।”
জাতিগত জনগণনার প্রতিশ্রুতি
রাহুল গান্ধী প্রতিশ্রুতি দেন যে, কংগ্রেস যদি দিল্লিতে সরকার গঠন করে, তাহলে তারা অবশ্যই জাতিগত জনগণনা করবে। তিনি বলেন, “জাতিগত জনগণনা আমাদের অগ্রাধিকার। এটি শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষদের ক্ষমতায়নের এক বড় পদক্ষেপ। দিল্লিতে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে আমরা অবিলম্বে এই কাজ শুরু করব।”
মোদী-কেজরিওয়ালের মধ্যে তুলনা
রাহুল গান্ধী তার বক্তব্যে বলেন, “অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং নরেন্দ্র মোদী একই পথের পথিক। তারা উভয়েই জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেন এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের সমর্থন আদায় করেন। তবে তারা কখনোই বাস্তব সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চান না। জাতিগত জনগণনা থেকে শুরু করে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অধিকার নিয়ে মোদী এবং কেজরিওয়াল একই নীরবতা পালন করেন।”
কেজরিওয়ালের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে রাহুল গান্ধী বলেন, “কেজরিওয়াল দাবি করেন তিনি জনগণের জন্য কাজ করেন। তাহলে তিনি জাতিগত জনগণনার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নীরব কেন? তিনি কি পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষদের প্রকৃত পরিস্থিতি জানতে চান না? নাকি তিনি জানেন যে এই তথ্য সামনে এলে তার সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে যাবে?”
বিরোধী জোটে নতুন উত্তেজনা
রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্যের পর বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-এর অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কংগ্রেস এবং আপ-এর মধ্যে মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে জাতিগত জনগণনার মতো বিষয় নিয়ে এই তর্ক বিরোধী জোটের ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্য আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি সুপরিকল্পিত কৌশল। কংগ্রেস দল জাতিগত জনগণনার মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, আপ এই বিষয়ে নীরব থেকে তাদের মধ্যবিত্ত ভোটারদের হারানোর ঝুঁকি এড়াতে চাইছে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের পর দিল্লির রাজনীতিতে আলোড়ন শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের সমর্থকরা জাতিগত জনগণনার প্রতিশ্রুতিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। অপরদিকে, আপ সমর্থকরা দাবি করছেন, এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কৌশল, এবং কেজরিওয়াল সরকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছে।
দিল্লির রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বিতর্ক কতটা প্রভাব ফেলবে, তা আগামী দিনে বোঝা যাবে। তবে মোদী ও কেজরিওয়ালকে একই বন্ধনীতে ফেলে রাহুল গান্ধীর আক্রমণ কংগ্রেসের রাজনীতিতে নতুন গতিবিধি আনবে বলেই মনে করা হচ্ছে।