ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Modi Gadkari) সম্প্রতি দাবি করেছেন, “ভারত এখন বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলির মধ্যে গণ্য হচ্ছে, যেখানে সমতার মাত্রা সবচেয়ে বেশি।” তবে, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি এই দাবির বিপরীতে বলেছেন, “দেশে গরিবের সংখ্যা বাড়ছে।” এই দুই বিবৃতির মধ্যে স্পষ্ট দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী একই ধরনের মন্তব্য করায় বিজেপির তরফ থেকে তাঁর তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে দেশের ১% ধনী ব্যক্তির হাতে দেশের ৪০% সম্পদ রয়েছে, যা দেশে ধনী-গরিবের মধ্যে বাড়তে থাকা বৈষম্যের প্রমাণ। এই ঘটনা ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
রাহুল গান্ধী বারবার দাবি করেছেন, বিজেপি সরকারের আমলে ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্যের খাই ক্রমশ বড় হচ্ছে। তিনি বলেন, “দেশের সম্পদ মুষ্টিমেয় ধনীদের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, আর গরিবেরা আরও দরিদ্র হচ্ছে।” তাঁর এই বক্তব্যকে বিজেপি নেতারা ‘দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রচেষ্টা’ বলে সমালোচনা করেছেন।
কিন্তু নীতিন গড়করির সাম্প্রতিক মন্তব্য এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। গড়করি, যিনি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের একজন এবং মোদীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত, তিনি বলেন, “দেশে গরিবের সংখ্যা বাড়ছে, এবং আমাদের এই সমস্যার সমাধানে আরও কাজ করতে হবে।” এই মন্তব্য মোদীর ‘সমতার দেশ’ দাবির সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই দ্বন্দ্ব বিজেপির অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্লেষক সুজিত ঘোষ বলেন, “মোদী যখন বিশ্ব মঞ্চে ভারতকে ‘বিশ্বগুরু’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন, তখন গড়করির মতো একজন শীর্ষ নেতার এই মন্তব্য সরকারের অর্থনৈতিক নীতির দুর্বলতাকে প্রকাশ করে।”
তিনি আরও বলেন, “রাহুল গান্ধী যখন একই কথা বলেন, তখন তাঁকে দেশবিরোধী বলা হয়। এটা বিজেপির দ্বৈত নীতির প্রমাণ।” অক্সফামের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের ১% ধনী ব্যক্তির হাতে দেশের ৪০% সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে, যখন নিম্ন আয়ের ৫০% মানুষের হাতে মাত্র ৩% সম্পদ রয়েছে।
এই পরিসংখ্যান দেশে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে।মোদীর দাবি, তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, যেমন মুদ্রা যোজনা, উজ্জ্বলা যোজনা এবং আয়ুষ্মান ভারত, গরিবদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে। তিনি বলেন, “আমরা ৬০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছি। ভারত এখন সমতার দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলির মধ্যে রয়েছে।”
তবে, বিরোধীরা এই দাবিকে ‘অতিরঞ্জিত’ বলে সমালোচনা করেছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “মোদী সরকারের আমলে ধনীদের জন্য কর কমানো হয়েছে, আর গরিবদের উপর জিএসটি’র বোঝা চাপানো হয়েছে। এটা কোন সমতার নমুনা?”নীতিন গড়করির মন্তব্য এই বিতর্কে নতুন জ্বালানি যোগ করেছে।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে গরিবের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি ও ক্ষুদ্র শিল্পের উপর আরও জোর দিতে হবে।” তাঁর এই বক্তব্য বিজেপির অভ্যন্তরে অস্বস্তি তৈরি করেছে, কারণ এটি মোদীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ স্লোগানের বিপরীতে যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গড়করির মন্তব্য বিজেপির অর্থনৈতিক নীতির দুর্বলতাকে প্রকাশ করে।
এটা স্পষ্ট যে সরকারের দাবি এবং বাস্তবতার মধ্যে বড় ফারাক রয়েছে।”রাহুল গান্ধী এই ইস্যুতে সরব হয়ে বলেন, “মোদী সরকারের নীতি ধনীদের পক্ষে। দেশের ১% ধনী মানুষের হাতে ৪০% সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে, আর গরিবেরা ক্রমশ দরিদ্র হচ্ছে। এটা কোন বিশ্বগুরুর লক্ষণ নয়।” তিনি আরও দাবি করেন, বিজেপি সরকারের আমলে বেকারত্ব এবং মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
সামাজিক মাধ্যমে রাহুলের এই মন্তব্য ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “রাহুল গান্ধী সত্যি কথা বলেছেন। মোদী সরকার ধনীদের জন্য কাজ করছে, গরিবের কথা কেউ ভাবছে না।”বিজেপি এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়েছে। দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “রাহুল গান্ধী দেশের অগ্রগতি দেখতে পান না।
মোদী সরকারের আমলে গরিবের জন্য বিনামূল্যে রেশন, স্বাস্থ্য বীমা এবং আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর সমালোচনা কেবল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।” তবে, গড়করির মন্তব্যের পর বিজেপির এই দাবি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, ভারতের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও, এই উন্নয়নের সুফল সমাজের নিম্নবিত্ত পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না।
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই)-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারত্বের হার ৮% ছাড়িয়েছে, এবং মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মোদীর ‘সমতার দেশ’ দাবি বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে সমালোচকরা মনে করছেন।সামাজিক মাধ্যমে এই বিতর্ক তীব্র আকার নিয়েছে।
একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মোদী বিশ্বগুরুর স্বপ্ন দেখছেন, কিন্তু গরিবের পেটে ভাত নেই। গড়করি সত্যি কথা বলেছেন।” আরেকজন লিখেছেন, “রাহুল গান্ধী এই বৈষম্যের কথা বলায় তাঁকে ট্রোল করা হয়, কিন্তু বিজেপির নেতারা একই কথা বললে কোনও সমস্যা নেই। এটা দ্বৈত নীতি।”এই বিতর্ক আগামী দিনে ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের ‘স্বাতী’ রাডার কিনতে ইচ্ছুক এই দেশ
মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতি এবং ধনী-গরিবের বৈষম্য নিয়ে আলোচনা ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। গড়করির মন্তব্য এবং রাহুল গান্ধীর সমালোচনা বিজেপির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, এবং আগামী নির্বাচনে এই ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।