কেরলের কোট্টায়ামের একটি সরকারি নার্সিং কলেজে র্যাগিংয়ের এক ভয়াবহ ঘটনায় পাঁচ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রথম বর্ষের তিন ছাত্রকে তিন মাস ধরে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালায় তৃতীয় বর্ষের পাঁচ ছাত্র। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজ ক্যাম্পাসে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়।
গত নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই নির্যাতনের বিবরণে বলা হয়েছে, প্রথম বর্ষের ছাত্রদের নগ্ন অবস্থায় দাঁড় করিয়ে তাদের গোপন অঙ্গে ডাম্বেল ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। জ্যামিতি বক্সের কম্পাসের মতো ধারালো জিনিস দিয়ে তাদের শরীরে আঘাত করা হতো। ক্ষতস্থানে লোশন লাগিয়ে আরও যন্ত্রণা দেওয়া হতো। চিৎকার করলে তাদের মুখে জোর করে লোশন ঢুকিয়ে দেওয়া হত।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, সিনিয়ররা এই নির্যাতনের ভিডিও করে জুনিয়রদের ভয় দেখাত, এবং বলা হত তারা যদি কাউকে জানায়, তবে তাদের একাডেমিক ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়া হবে। এছাড়াও, রবিবার নিয়মিত জুনিয়রদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে দেদারে মদের আসর চলতো। যারা টাকা দিতে অস্বীকার করত, তাদের মারধরও করা হত।
এক ছাত্র এই নির্যাতন আর সহ্য করতে না পেরে তার বাবাকে জানায়। বাবার সাহসিকতায় কোট্টায়াম গান্ধীনগর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। ওই অভিযোগের পরই পাঁচ সিনিয়র ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অ্যান্টি-র্যাগিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এই ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে কেরলে র্যাগিং ও বুলিংয়ের ক্রমবর্ধমান সমস্যাকে আবারও একবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ আগে কোচির এক ১৫ বছর বয়সী স্কুলছাত্র আত্মহত্যা করেছিল। তার মা অভিযোগ করেছিলেন, সহপাঠীদের বুলিং তার ছেলেকে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এই ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, র্যাগিং-এর বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এই ধরনের ঘটনা রোধে আরও কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, কলেজ ক্যাম্পাসে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
কেরল সরকারও এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, র্যাগিং-এর বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকলেও এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি কলেজগুলিতে সচেতনতা কর্মসূচি চালু করারও ঘোষণা দিয়েছেন।
এই ঘটনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে র্যাগিং ও বুলিং রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকল স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে।