নয়াদিল্লি, ৪ ডিসেম্বর: চার বছর পর ভারতে পা রাখলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন (Putin India visit 2025)। পালাম বিমানবন্দরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত হয়ে তাঁকে রেড কার্পেটে স্বাগত জানালেন। দুই নেতা আলিঙ্গন করে একই গাড়িতে চেপে বিমানবন্দর থেকে রওনা দিলেন, যা ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের গভীরতার প্রতীক।
এই দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলন হবে, যার ফোকাস থাকবে প্রতিরক্ষা, শক্তি ও বাণিজ্যের উপর। ভারতের মাটিতে পা দিয়েই তিনি পরোক্ষ ভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে নিশানা করেছেন।
নেপালকে মুসলিম রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টায় বাংলাদেশী সংগঠন
পুতিনের আগমন ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যখন আমেরিকার নতুন নিষেধাজ্ঞা ভারতের রাশিয়ান তেল আমদানিকে প্রভাবিত করছে।পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই পুতিন ভারতীয় সাংবাদিকদের সামনে তার মন্তব্য জানালেন। সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ভারত-রাশিয়া সহযোগিতা কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়, এটি কেবল দুই দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য।
ওয়াশিংটনের নয়াদিল্লি ও মস্কোর প্রতি আক্রমণাত্মক নীতির পটভূমিতে এই বন্ধুত্ব আমাদের স্থিতিশীলতার প্রমাণ।” পুতিনের এই কথা যেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার প্রত্যক্ষ জবাব। ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের রাশিয়ান তেল ক্রয়কে ‘ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থায়ন’ বলে অভিযোগ করে ৫০ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করেছে, যা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
শক্তি সহযোগিতার প্রসঙ্গে পুতিন আরও স্পষ্ট হলেন। তিনি বলেন, “কিছু ‘অ্যাক্টর’ আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ভারতের আন্তর্জাতিক বাজারে উত্থান পছন্দ করছে না। তারা রাজনৈতিক কারণে ভারতের প্রভাব সীমিত করতে ‘কৃত্রিম বাধা’ তৈরি করছে।” এখানে ‘অ্যাক্টর’ বলতে পশ্চিমা দেশগুলোকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আমেরিকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ান তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
ফলে ভারতের কাঁচা তেল আমদানি তিন বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এপ্রিল-আগস্ট ২০২৫-এ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২৮.২৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস। তবু পুতিন আশাবাদী: “পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আমাদের শক্তি সহযোগিতাকে বড় করে প্রভাবিত করেনি। এটি অস্থায়ী, এবং আমরা প্রযুক্তির সাহায্যে এগুলো অতিক্রম করব।”
এই সফরের পটভূমি ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব। ২০২২ সাল থেকে রাশিয়া ভারতের সবচেয়ে বড় সমুদ্রপথে তেল সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে, যা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতের জ্বালানি দাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে। কিন্তু ট্রাম্পের ‘শান্তি প্রচেষ্টা’ ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি ভারতকে দোষারোপ শুরু করেছেন।
ভারতের বড় তেল কোম্পানিগুলো রাশিয়ান কাঁচা তেল ক্রয় বন্ধ করে দিয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। রাশিয়ার প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞা শুধু অল্পকালীন হ্রাস ঘটাবে, দীর্ঘমেয়াদে আমরা এর বাইরে যাব।”
