নয়াদিল্লি: দীর্ঘ চার বছর পর দুদিনের ভারত সফরে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট (Putin Guard of Honour in India)। গতকাল প্রটোকল ভেঙে তাকে স্বাগত জানাতে পালাম বিমান বন্দরে গিয়েছিলেন প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ তাকে গার্ড অফ অনার দিয়ে সম্মানিত করলেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দৌপদী মুর্মু। এই দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরের মাধ্যমে দুই দেশের নেতারা শুধু কূটনৈতিক আলোচনাই করবেন না, বরং বহুমুখী সহযোগিতার নতুন অধ্যায় লিখবেন।
সকাল ১১টার দিকে রাষ্ট্রপতি ভবনের ফোরকোর্টে পুতিন এলেন। লাল কার্পেট বিস্তৃত, জাতীয় সঙ্গীতের সুরে পরিবেষ্টিত এই স্থানে ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর যোদ্ধারা দাঁড়িয়ে ছিলেন অটল ভঙ্গিতে। ২১ কামানের গর্জনে স্বাগত জানানো হলো রাশিয়ান অতিথিকে। প্রথমে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বাজল, তারপর রাশিয়ার। পুতিন নিজে গার্ড অফ অনার পরিদর্শন করলেন, যোদ্ধাদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করলেন।
আম্বানি গ্ৰুপের বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপ নিল ইডি
এই মুহূর্তটি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং দুই জাতির মধ্যে অটুট বিশ্বাসের প্রতিফলন। রাষ্ট্রপতি মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি পুতিনকে স্বাগত জানিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদের পরস্পর পরিচয় করিয়ে দিলেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।এই সফরটি কোনো সাধারণ সফর নয়। এটি ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের অংশ।
পুতিন ৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে পৌঁছেছিলেন, এবং আজকের এই অনুষ্ঠান তার সফরের মূল আকর্ষণ। রাষ্ট্রপতি ভবনের পর পুতিন সোজা রাজঘাটে গেলেন। সেখানে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে তারা ফুলার্ঘ্য দিলেন। এই কাজটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং শান্তি ও অহিংসার বার্তা বহন করে। গান্ধীজির আদর্শ রাশিয়ার জন্যও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে।
রাজঘাট থেকে ফিরে পুতিন হায়দ্রাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলেন। এই বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ইতিহাস দেখলে এই অনুষ্ঠানের গুরুত্ব আরও স্পষ্ট হয়। সোভিয়েত আমলে থেকে দুই দেশের বন্ধুত্ব অটুট।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) সমর্থন ভারতের জন্য অবিস্মরণীয়। আজও এই সম্পর্ক কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে অব্যাহত। গত কয়েক বছরে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি বেড়েছে, যা বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও ভারতের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রেখেছে।
প্রতিরক্ষায় এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমের চুক্তি একটি উদাহরণ। আজকের শীর্ষ সম্মেলনে নতুন চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাণিজ্যের লক্ষ্য ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সংযোগকে আরও শক্তিশালী করবে।
