আইএসআই মদতপুষ্ট জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে জখম দুই

punjab-terror-module-encounter-ludhiana-chinese-grenades-recovered

পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় পাকিস্তানি আইএসআই-যোগ থাকা একটি জঙ্গি মডিউলকে ঘিরে বড়সড় অভিযান (Ludhiana encounter) চালিয়েছে রাজ্য পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে চলা এই অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়েছে দুই সন্দেহভাজন ব্যক্তি, যাদের পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি। অভিযুক্তরা একটি চলমান জঙ্গি নেটওয়ার্কের অংশ বলে দাবি করা হয়েছে, যা পাকিস্তান থেকে সমর্থন ও নির্দেশ পাচ্ছিল বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

Advertisements

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে দুটি চীনা তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, পাঁচটি উন্নত মানের বিদেশি পিস্তল এবং বহুসংখ্যক লাইভ কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তকারী আধিকারিকদের মতে, আগ্নেয়াস্ত্রগুলো আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে পাঞ্জাবে সক্রিয় কয়েকটি জঙ্গি চক্রের সঙ্গে মিলছে এমন উপকরণ।

   

অভিযানের সূচনা—বিশেষ ইনপুটের ভিত্তিতে নাকা চেকিং

পুলিশ সূত্রের খবর, লুধিয়ানার কাছে একটি নির্দিষ্ট এলাকা-য় সন্দেহজনক নড়াচড়ার ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থার ইনপুট পাওয়া যায়। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই রাতেই নাকা বসানো হয়। নাকা চৌকিতে পৌঁছে একটি মোটরসাইকেলে থাকা দুই যুবক পালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। পুলিশ তাদের থামাতে গেলে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি চালানো শুরু হয়।

এই গুলিতেই সন্দেহভাজন দুই যুবক আহত হয় ও ঘটনাস্থলেই পড়ে যায়। পুলিশ দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দু’জনেরই অবস্থা গুরুতর হলেও স্থিতিশীল।

পূর্বে তিনজন গ্রেফতার—বড় জঙ্গি মডিউলের ইঙ্গিত

এই একই জঙ্গি মডিউলের সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে গত কয়েক সপ্তাহে তিনজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পাঞ্জাব পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকেই নতুন তথ্য উঠে আসে, যা বুধবারের অভিযানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।

তদন্তকারীদের মতে, পাকিস্তানের আইএসআই-সক্রিয় জঙ্গি চক্র—যারা পাঞ্জাবে নাশকতা ঘটানোর জন্য সক্রিয়ভাবে অস্ত্র ও তহবিল পাঠাচ্ছিল—তারাই এই চক্রের মূল সূত্রধর। গ্রেফতার হওয়া সন্দেহভাজনরা ভারতে অস্ত্র সংগ্রহ, স্লিপার সেল সক্রিয় করা এবং লক্ষ্য বাছাইয়ের কাজ করছিল বলে পুলিশের ধারণা।

চীনা তৈরি গ্রেনেড উদ্ধার—সীমান্তপারে সমন্বিত নেটওয়ার্কের সন্দেহ

ঘটনাস্থল থেকে চীনা নির্মিত দুইটি গ্রেনেড উদ্ধার হওয়ায় তদন্ত আরও জটিল হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই ধরনের গ্রেনেড সাধারণত আন্তর্জাতিক অস্ত্র চক্রের হাত ঘুরে দক্ষিণ এশিয়াতে ব্যবহৃত হয়। পাকিস্তানি আইএসআই, লস্কর-এ-তৈবা বা অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী এগুলি ব্যবহার করে থাকে—এমন নজিরও অতীতে রয়েছে।

তদন্তকারী এক কর্মকর্তা বলেন—

Advertisements

“এই গ্রেনেড ও পিস্তলগুলি সীমান্তের ওপার থেকে আনা হয়েছে। অস্ত্রশস্ত্রের সঠিক উৎস খুঁজে বের করতে কেন্দ্রীয় সংস্থার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।”

নাশকতার বড় পরিকল্পনা ছিল কি? তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে

পাঞ্জাব পুলিশ মনে করছে, এই মডিউলটি বড় কোনও নাশকতা ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের পরিমাণ, মান এবং সংগঠিত নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত দেখে মনে করা হচ্ছে—

✔ রাজনৈতিক সমাবেশ

✔ গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য স্থাপনা

✔ শিল্পাঞ্চল

✔ বা নিরাপত্তা বাহিনীই ছিল সম্ভাব্য লক্ষ্য।

তবে তদন্ত চলমান থাকায় পুলিশ এখনও কোনও চূড়ান্ত মন্তব্য করতে নারাজ।

কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা বৃদ্ধি

এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি—এনআইএ, আইবি ও র-এর কর্মকর্তারা রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। পাকিস্তানি আইএসআই-এর সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষে জঙ্গি যোগের বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় তদন্ত উচ্চ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের আতঙ্ক—অঞ্চলে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা

ঘটনার পর লুধিয়ানা ও আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাস্তায় বাড়ানো হয়েছে টহলদারি, চেকিং এবং নজরদারি। পুলিশ সাধারণ মানুষকে সতর্ক রেখে জানিয়েছে—

“কোনও সন্দেহজনক নড়াচড়া দেখলে সঙ্গে সঙ্গে খবর দিন, আতঙ্কে নয়—সহযোগিতায় কাজ হবে।”

লুধিয়ানায় এই অভিযানে পাকিস্তান-সংযুক্ত জঙ্গি নেটওয়ার্কের কার্যকলাপে নতুন আলোকপাত হয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও বিস্ফোরক, পূর্বে গ্রেফতার হওয়া সন্দেহভাজনরা এবং সীমান্তপারে সমন্বিত মডিউলের ইঙ্গিত—সব মিলিয়ে তদন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সংস্থার মতে, এটি এক বড় নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়া সম্ভাবনা।