পাঞ্জাব এই মুহূর্তে গত কয়েক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সুতলজ, বেয়াস এবং রাভি নদীসহ বেশ কয়েকটি মৌসুমি নদী এবং জলধারায় অতিবৃষ্টির কারণে জলস্তর বিপজ্জনক হারে বেড়ে গেছে। হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীরের উজান এলাকায় টানা বৃষ্টির ফলে পাঞ্জাবে হঠাৎ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই বন্যায় ৩৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বন্যার কবলে পাঞ্জাব: রাজ্যের ভয়াবহ চিত্র
ফিরোজপুর, গুরদাসপুর ও হোশিয়ারপুর—এই তিন জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। নদীগুলোর জলস্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আশপাশের গ্রামগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ২০টিরও বেশি গ্রাম পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যেগুলোতে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় এখন বোট বা হেলিকপ্টার। সেনাবাহিনী, NDRF (ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স) এবং BSF (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) সম্মিলিতভাবে উদ্ধারকাজে নেমেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা (রেড অ্যালার্ট) জারি রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে এবং স্থানীয় স্কুল-কলেজগুলিকে অস্থায়ী আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিতর্ক: ‘হাইড্রোজেন বোমা’ মন্তব্যে রাহুল গান্ধীকে তীব্র কটাক্ষ
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। বিহারে ‘ভোট অধিকার র্যালি’তে বক্তব্য রাখার সময় তিনি দাবি করেন, “SIR (Socio-Economic and Caste Census) সম্পর্কিত এমন কিছু তথ্য আছে, যা সামনে এলে পুরো দেশ যেন একটি ‘হাইড্রোজেন বোমা’র মতো বিস্ফোরণ অনুভব করবে।”
বিজেপি এই মন্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এবং ‘সংবেদনহীন’ বলে কটাক্ষ করেছে। দলের মুখপাত্র বলেন, “যখন পাঞ্জাবের মানুষ জীবন-মরণের লড়াইয়ে লিপ্ত, তখন একজন জাতীয় নেতা কীভাবে এমন তুলনামূলক মন্তব্য করতে পারেন? এটি রাজনৈতিক চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়।”
রাহুল গান্ধী যদিও পরে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি কেবলমাত্র সরকারের গোপন নীতিমালার বিরুদ্ধেই আওয়াজ তুলেছেন এবং তাঁর মন্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, তবে বিতর্ক থামেনি।
মানবিকতা বনাম রাজনীতি: প্রশ্ন তুলছে জনতা
সাধারণ মানুষ এবং বিশ্লেষক মহলে প্রশ্ন উঠছে—এই দুর্যোগের সময়েও কেন রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষারোপে ব্যস্ত? যখন লক্ষাধিক মানুষ ঘরছাড়া, খাবার এবং ওষুধের অভাবে ভুগছে, তখন রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।