পঞ্জাব বন্যায় চরম ক্ষয়ক্ষতি গম চাষে! বাংলায় দাম বাড়বে আটা-ময়দার

পঞ্জাবে চলমান ভয়াবহ বন্যার (Punjab Flood) কারণে মৃতের সংখ্যা ৫১-এ পৌঁছেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাজ্যের কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি…

Punjab Flood

পঞ্জাবে চলমান ভয়াবহ বন্যার (Punjab Flood) কারণে মৃতের সংখ্যা ৫১-এ পৌঁছেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাজ্যের কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, প্রায় ১.৮৪ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এই বন্যাকে গত পাঁচ দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হিসেবে বর্ণনা করেছেন পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হরপাল সিং চিমা।

এই বিপর্যয়ের ফলে ভারতের ‘খাদ্যশস্যের ভাণ্ডার’ হিসেবে পরিচিত পঞ্জাবের গম উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার প্রভাব বাংলার বাজারে আটা-ময়দার দামের উপর পড়তে পারে। কারণ বাংলায় বেশিরভাগ গম পঞ্জাব থেকেই আসে। রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে প্রায় ২,০০০ গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং ৩.৮৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন।

   

শতদ্রু, বিপাশা এবং ইরাবতী নদীসহ বিভিন্ন ছোট নদ-নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় এই বন্যা পরিস্থিতি (Punjab Flood) তৈরি হয়েছে। হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের উজানের এলাকায় অত্যধিক বৃষ্টিপাত এবং ভাকরা, পঙ এবং রঞ্জিত সাগর বাঁধ থেকে অতিরিক্ত জল নির্গমনের ফলে পঞ্জাবের নিম্নাঞ্চলে বন্যার তীব্রতা বেড়েছে।

গুরদাসপুর, অমৃতসর, ফিরোজপুর, পাঠানকোট, কপুরথালা এবং ফাজিলকা জেলাগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, হোশিয়ারপুর, লুধিয়ানা, বারনালা এবং মানসা জেলাতেও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।

এই বন্যায় (Punjab Flood) কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। পঞ্জাবের প্রায় ১.৮৪ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল, বিশেষ করে ধান, ভুট্টা, তুলা এবং গম, পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। গুরদাসপুরে একাই ৪০,১৬৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতির ফলে রাজ্যের অর্থনীতি, যা মূলত কৃষিনির্ভর, মারাত্মক ধাক্কা খেয়েছে।

পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান একটি বিশেষ ‘গিরদাওয়ারি’ (Punjab Flood) আদেশ দিয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, কৃষকরা বর্তমান ক্ষতিপূরণের পরিমাণকে অপর্যাপ্ত বলে মনে করছেন। শিরোমণি আকালি দলের নেতা সুখবীর সিং বাদল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সম্পূর্ণ ঋণ মকুব এবং প্রতি একর ৫০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।

পঞ্জাবের এই ক্ষয়ক্ষতি বাংলার বাজারে গম এবং আটা-ময়দার দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। পঞ্জাব ভারতের গম উৎপাদনের একটি প্রধান কেন্দ্র, এবং এই বন্যায় গমের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলাকে প্রভাবিত করতে পারে। বাংলায়, যেখানে গমের উপর নির্ভরশীল খাদ্যশিল্প এবং গৃহস্থালি ব্যবহার উল্লেখযোগ্য, আটা-ময়দার দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

Advertisements

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গমের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় আমদানির উপর নির্ভরতা বাড়তে পারে, যা দাম আরও বাড়িয়ে দেবে(Punjab Flood)। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ), ভারতীয় সেনাবাহিনী, সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ), পঞ্জাব পুলিশ এবং জেলা প্রশাসন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে।

প্রায় ২২,৮৫৪ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, এবং ২০০টিরও বেশি ত্রাণ শিবিরে ৭,০০০-এর বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পঞ্জাব সরকার ৭১ কোটি টাকার তাৎক্ষণিক ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আরও তহবিলের জন্য কেন্দ্রের কাছে ১৪,০০০ কোটি টাকার দাবি জানিয়েছে।

তবে, রাজনৈতিক মহলে এই বন্যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আম আদমি পার্টি (এএপি) সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের উপর পর্যাপ্ত তহবিল না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। পঞ্জাবের মন্ত্রী আমন অরোরা কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের বন্যার জন্য অবৈধ খননকে দায়ী করার বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা ত্রাণ ঘোষণার পরিবর্তে “ফটো-অপ” করতে ব্যস্ত।

কবে থেকে সুপার সিক্সের অভিযান শুরু করছে ইস্টবেঙ্গল?

এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৯ সেপ্টেম্বর পঞ্জাব সফরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে, যেখানে তিনি বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন। এই সফরে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য নতুন ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে, যা পঞ্জাবের কৃষক এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আশার আলো হতে পারে।