২০১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। ভালোবাসার দিন ভ্যালেন্টাইন ডে। কিন্তু সেদিন ভারতবর্ষের হৃদয়ে যেন গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়। জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় (Pulwama Attack) ৪০ জনেরও বেশি সিআরপিএফ (CRPF) জওয়ান শহিদ হন। দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। গোটা ভারত ক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ মানুষ, সবাই চাইছিলেন কঠোর প্রতিশোধ।
পুলওয়ামা হামলা: কীভাবে ঘটল?
পুলওয়ামার অবন্তীপোরার কাছে জওয়ানদের কনভয় যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময়েই বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার থেকে আসা এক আত্মঘাতী জঙ্গি জওয়ানদের কনভয়ের একটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা মারে। মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। ৪০ জনেরও বেশি জওয়ান প্রাণ হারান। এই হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM)।
বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক: প্রতিশোধের অভিযান
দেশজুড়ে প্রতিশোধের ডাক ওঠে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, এই শহিদদের রক্ত বৃথা যাবে না। ২৬ ফেব্রুয়ারি, মধ্যরাতে ভারতীয় বায়ুসেনা পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার বালাকোটে ঢুকে জইশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। দাবি করা হয়, এই এয়ার স্ট্রাইকে বহু জঙ্গি ও প্রশিক্ষণ শিবির ধ্বংস হয়। ভারতীয় সেনার এই পাল্টা আঘাত দেশবাসীর মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহার তৃপ্তি আনলেও, প্রশ্নও রয়ে যায় অনেক।
তদন্তে কী উঠে এল?
পুলওয়ামা হামলার পর জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) তদন্ত শুরু করে। উঠে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। জানা যায়, হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরক ও গাড়ি পাকিস্তান থেকে এসেছে এবং জইশ-ই-মোহাম্মদ জড়িত ছিল। সন্দেহ করা হয়, ভারতীয় নিরাপত্তার কোনও ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়েই এই হামলা চালানো হয়েছিল। প্রশ্ন ওঠে, এত বড় কনভয় নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কীভাবে আত্মঘাতী হামলাকারী বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে সেখানে পৌঁছাতে পারল?
রাজনীতি ও বিতর্ক
পুলওয়ামার হামলা ও তার পরবর্তী প্রতিশোধমূলক বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও কম হয়নি। অভিযোগ ওঠে, এই ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয়তাবাদী আবেগকে উসকে দেওয়া হয়েছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ তোলে। এমনকি, বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের প্রকৃত প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিরোধী দলগুলো প্রমাণ চায়, ঠিক কতজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। যদিও ভারতীয় সেনা জানায়, তাদের উদ্দেশ্য ছিল শত্রুপক্ষকে বার্তা দেওয়া, নিহতের সংখ্যা গণনা নয়।
ছয় বছর পরও প্রশ্ন থেকে যায়
২০২৫ সালে এসে পুলওয়ামার সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও দেশবাসীর মনে জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু আজও কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। কীভাবে এত বড় নিরাপত্তা ফাঁকি দিয়ে জঙ্গিরা হামলা চালাল? হামলার পুরো ষড়যন্ত্রে কারা ছিল? রাজনৈতিক তরজার বাইরে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকেও নজর দেওয়া কি জরুরি ছিল না?
ভারতের ইতিহাসে পুলওয়ামা হামলা শুধুই একটি জঙ্গি হামলা নয়, এটি এক রক্তাক্ত অধ্যায়, যা বহু প্রশ্ন রেখে গেছে। প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু কি সত্যিই সব উত্তর মিলেছে?