বিহারের সুপৌল মঙ্গলবার প্রত্যক্ষ করল বিরোধী জোট ‘INDIA ব্লক’-এর শক্তি প্রদর্শন। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের অন্যতম মুখ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদ্রা এদিন যোগ দিলেন তাঁর দাদা তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ‘ভোটাধিকার যাত্রা’-য়। প্রিয়াঙ্কার এই উপস্থিতি কেবল কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যেই নয়, গোটা জোট শিবিরে নতুন উদ্দীপনা যোগ করেছে।
সকাল থেকেই সুপৌলের পথে মানুষের ঢল নেমেছিল। রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ হাত নেড়ে অভিবাদন জানান রাহুল ও প্রিয়ঙ্কাকে। সঙ্গে ছিলেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভন্ত রেড্ডি, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এবং বিরোধী জোটের আরও বহু নেতা। তাঁরা সকলেই একটি খোলা গাড়ির ছাদে উঠে বসে পথচলা শুরু করেন। ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল সেই গাড়ি, আর তার চারপাশে জনতার উল্লাসধ্বনি যেন আরও বাড়িয়ে তুলছিল রাজনৈতিক আবহ।
প্রিয়াঙ্কার অংশগ্রহণে নতুন মাত্রা
রাহুল গান্ধীর দীর্ঘ রাজনৈতিক সফর বা পদযাত্রার সঙ্গে ভারতীয় রাজনীতির জনগণের এক বিশেষ আবেগ জড়িয়ে আছে। কিন্তু মঙ্গলবার সুপৌলে প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। রাজনৈতিক মহলের মতে, দীর্ঘদিন ধরে প্রিয়াঙ্কা সক্রিয় থাকলেও, জনসমক্ষে এভাবে দাদার সঙ্গে বড় মঞ্চ ভাগ করে নেওয়া কংগ্রেসের একতা ও দৃঢ়তার প্রতীক।
এক কংগ্রেস নেতা বলেন, “রাহুলজি এবং প্রিয়ঙ্কাজির একসঙ্গে উপস্থিতি কর্মীদের নতুন শক্তি দিয়েছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই বার্তাই যাবে যে কংগ্রেস পরিবার ও INDIA ব্লক ঐক্যবদ্ধ।”
বিরোধী ঐক্যের বার্তা
‘ভোটাধিকার যাত্রা’-য় কেবল কংগ্রেস নয়, আরজেডি, জেডিইউ-সহ একাধিক দলের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য একটাই—জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বিশেষত বিহারের মতো রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিরোধী দলগুলির এই ঐক্য আগাম নির্বাচনী সমীকরণকে যথেষ্ট প্রভাবিত করতে পারে।
তেজস্বী যাদব এদিন জনসভায় বলেন, “আমরা একসঙ্গে লড়াই করব। এই দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র আর মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার জন্য আমরা কোনও আপস করব না।”
উচ্ছ্বসিত জনতার সমাগম
মঙ্গলবারের যাত্রাপথ কার্যত উৎসবের রূপ নেয়। গ্রামগঞ্জ থেকে শহরে ভিড় জমায় সাধারণ মানুষ। বহুজনের হাতে ছিল কংগ্রেস ও আরজেডির পতাকা। অনেকেই মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত। কেউ কেউ আবার গাড়ির দিকে ফুল ছুঁড়ে শুভেচ্ছা জানান। প্রিয়াঙ্কা ও রাহুল দু’জনেই বারবার হাত নেড়ে ও মিষ্টি হাসি দিয়ে জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
একজন স্থানীয় কৃষক বলেন, “আমরা এত কাছ থেকে প্রিয়াঙ্কাজিকে প্রথম দেখলাম। উনি আমাদের আশার প্রতীক। রাহুলজির সঙ্গে উনি থাকলে লড়াই আরও শক্তিশালী হবে।”
রাজনৈতিক গুরুত্ব
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুপৌলের এই মঞ্চ বিরোধী জোটের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিহারের ভোটব্যাঙ্কে যুবক, কৃষক ও মহিলা ভোটারদের প্রভাব যথেষ্ট। প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর অংশগ্রহণে মহিলাদের মধ্যে বিশেষ সাড়া পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর ধারাবাহিক সফর মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ বাড়াচ্ছে।
বিজেপি অবশ্য বিরোধী শিবিরের এই পদক্ষেপকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না। তাঁদের বক্তব্য, “লোকসভা নির্বাচনে মানুষ উন্নয়ন চায়, পরিবারতন্ত্র নয়।” তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, বিরোধী শিবির যদি এই ঐক্য বজায় রাখতে পারে, তবে বিজেপির জন্য চ্যালেঞ্জ বাড়তে পারে।