সংসদের বাদল অধিবেশনে (Priyanka) লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার উদাহরণ টেনে বলেছেন, “২০০৮ সালের মুম্বই হামলার পর মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন।
তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু মণিপুর এবং পহেলগাঁওয়ের মতো ঘটনা অমিত শাহের নাকের ডগায় ঘটলেও তিনি কেন এখনও তাঁর পদে বহাল রয়েছেন?” প্রিয়াঙ্কার এই মন্তব্য লোকসভায় তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার বিষয়টি সামনে এনেছে।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তাঁর বক্তৃতায় পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং মণিপুরে চলমান সংঘাতের জন্য সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল ২০২৫-এ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সেখানে কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না, কোনও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না।
মানুষ সরকারের উপর ভরসা করে সেখানে গিয়েছিল, কিন্তু সরকার তাদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছে।” তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, “এই হামলা কীভাবে ঘটল? কেন একজনও নিরাপত্তা কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন না? এই ব্যর্থতার দায় কে নেবে?”
প্রিয়াঙ্কা ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার সঙ্গে তুলনা টেনে বলেন, “মুম্বই হামলার পর তৎকালীন মহারাষ্ট্র সরকার এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিল দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু পাহাড়গাম, মণিপুর এবং দিল্লি দাঙ্গার মতো ঘটনা অমিত শাহের মেয়াদে ঘটলেও তিনি কোনও দায় নেননি। এমনকি তিনি পদত্যাগের কথাও ভাবেননি।” তিনি অভিযোগ করেন, সরকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এই ব্যর্থতার জন্য কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না।
তিনি অপারেশন সিঁদুর এবং অপারেশন মহাদেব নিয়েও সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “অপারেশন সিঁদুর সফল হলেও, পহেলগাঁওয়ে হামলা রোধ করতে সরকারের গোয়েন্দা ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “মণিপুরে মাসের পর মাস ধরে সংঘাত চলছে, মানুষ মারা যাচ্ছে, কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনও দায়িত্ব নিচ্ছেন না। এটি সরকারের নৈতিক ব্যর্থতা।”
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সরকারের বিদেশনীতির সমালোচনা করে বলেন, “অপারেশন সিঁদুরের পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তিনি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছেন। কিন্তু সরকার এই বিষয়ে কোনও স্পষ্ট বক্তব্য দেয়নি। এটি আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতার প্রমাণ।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “যখন যুদ্ধ চলছিল, তখন কেন হঠাৎ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হল? এর পিছনে কী কারণ ছিল?”
তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অবহেলার কারণে সন্ত্রাসীরা দেশে প্রবেশ করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।” তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে সরকার নিরাপত্তা ব্যর্থতার দায় এড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে।
বিজেপি এই সমালোচনার জবাবে বলেছে যে অপারেশন সিঁদুর এবং মহাদেব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থানের প্রমাণ। অমিত শাহ লোকসভায় বলেন, “পহেলগাঁওয়ে হামলার তিনজন জঙ্গি —সুলেমান, আফগান এবং জিব্রান—অপারেশন মহাদেবে নিহত হয়েছে।
আমরা পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদকে উন্মোচিত করেছি।” তিনি কংগ্রেসের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদম্বরমের সমালোচনা করে বলেন, “চিদম্বরম পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে জঙ্গিদের জাতীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এটি পাকিস্তানকে রক্ষা করার চেষ্টা।”
ভাতা স্থগিতাদেশ চ্যালেঞ্জ, সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে নবান্ন
প্রিয়াঙ্কার এই বক্তৃতা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ অনেকে তাঁর এই সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, তবে বিজেপি সমর্থকরা এটিকে রাজনৈতিক প্রচার হিসেবে সমালোচনা করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিতর্ক আগামী দিনে সংসদে এবং জনগণের মধ্যে আরও তীব্র হবে, বিশেষ করে মণিপুর এবং পহেলগাঁওয়ের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে।