কর্ণাটক রাজ্যে আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ)-এর কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক তৈরি হল। রাজ্যের মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা প্রিয়াঙ্ক খাড়গে রবিবার রাজ্য সরকারের চিফ সেক্রেটারিকে একটি চিঠি লিখে সরকারি স্কুল ও কলেজের মাঠে আরএসএস-এর অনুষ্ঠান আয়োজনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
সরকারি স্কুল-কলেজে অনুষ্ঠান বন্ধের দাবি
প্রিয়াঙ্ক খাড়গে চিঠিতে লিখেছেন, “রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ নামক একটি সংগঠন সরকারি স্কুল ও কলেজ মাঠ ব্যবহার করে প্রদর্শনী ও স্লোগান দিচ্ছে, যা শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।” তিনি অনুরোধ করেছেন, সরকারি স্কুল, অনুদানপ্রাপ্ত স্কুল এবং যেকোনো সরকারি প্রাঙ্গণে আরএসএস-এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হোক।
মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য সরকারি স্থানে নিষেধাজ্ঞার দাবি
কেবল স্কুল বা কলেজ নয়, খাড়গে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকেও আবেদন জানিয়েছেন যাতে সরকারি পার্ক, মুজরাই (ধর্মীয় তহবিল) মন্দির এবং অন্যান্য সরকারি স্থানে আরএসএস-এর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। তাঁর বক্তব্য, সরকারি প্রাঙ্গণে এ ধরনের কার্যক্রম শিশু ও যুবকদের মনে নেতিবাচক চিন্তা ছড়ায় এবং এটি সমাজের কল্যাণের পরিপন্থী।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
চিঠিতে প্রিয়াঙ্ক খাড়গে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, “অনুমোদন ছাড়া এই ধরনের প্রদর্শনী পরিচালনা করছে পুলিশ, যা শিশু ও যুবকদের মানসিক অবস্থার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।” খাড়গের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের পদক্ষেপ শিশু ও সাধারণ জনগণের জন্য উদ্বেগজনক।
কেন্দ্রের সমর্থন বনাম কংগ্রেসের বিরোধিতা
প্রসঙ্গত, কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি আরএসএস-এর শতবর্ষ উদযাপনের সময় সংস্থাটিকে সমর্থন জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি নেতারা আরএসএস-এর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। অন্যদিকে, কংগ্রেস বরাবরই আরএসএস-এর বিরোধিতা করে এসেছে। কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, আরএসএস বিভাজনমূলক রাজনীতি করে এবং শিক্ষামূলক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পবন খেরার কটাক্ষ
আরএসএস-এর শতবর্ষ উপলক্ষে ডাকটিকিট ও বিশেষ স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করার সময় কংগ্রেস নেতা পবন খেরা তীব্র কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, “যদি আরএসএস-এর জন্য মুদ্রা প্রকাশ করতেই হয়, তবে তা ৬০ টাকার হওয়া উচিত, যা স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনায়ক দামোদর সাভারকার ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে পেতেন।” তিনি আরও বলেন, “যতই ডাকটিকিট ছাপানো হোক বা মুদ্রা প্রকাশ হোক, দেশটি মহাত্মা গান্ধীরই, এবং সেভাবেই থাকবে।”
রাজনৈতিক উত্তাপ
কর্ণাটকে আরএসএস-এর সরকারি স্থান ব্যবহারকে ঘিরে এই বিতর্ক রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনে এই ইস্যুটি রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, সরকারি স্কুল-কলেজ ও পার্ক শিশু ও যুবকদের শিক্ষামূলক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত। সেক্ষেত্রে আরএসএস-এর কার্যক্রম সেখানে হলে তা নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হতে পারে।
সব মিলিয়ে, প্রিয়াঙ্ক খাড়গের চিঠি শুধু একটি প্রশাসনিক আবেদন নয়, বরং কংগ্রেস বনাম বিজেপি-আরএসএস দ্বন্দ্বের নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। এখন দেখার বিষয়, কর্ণাটক সরকার এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়।৷