যুদ্ধের আবহে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার পর পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) মঙ্গলবার বলেছেন, ভারতের জল কেবলমাত্র ভারতের স্বার্থে ব্যবহৃত হবে। তিনি…

Narendra Modi

সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার পর পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) মঙ্গলবার বলেছেন, ভারতের জল কেবলমাত্র ভারতের স্বার্থে ব্যবহৃত হবে। তিনি জানান, পূর্বে ভারতের প্রাপ্য জল দেশের বাইরে চলে যেত, কিন্তু এখন তা ভারতের স্বার্থে প্রবাহিত হবে এবং দেশের কাজে ব্যবহৃত হবে। এই মন্তব্য পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার প্রেক্ষাপটে এসেছে।

ভারতের জল ভারতের স্বার্থে প্রবাহিত হবে

এবিপি নেটওয়ার্কের ‘ইন্ডিয়া@২০৪৭’ শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “এর আগে ভারতের প্রাপ্য জল দেশের বাইরে চলে যেত। এখন ভারতের জল ভারতের স্বার্থে প্রবাহিত হবে এবং এটি দেশের কাজে লাগবে।” এই মন্তব্য সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তের প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত। তিনি আরও বলেন, “জল নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনা চলছে… ‘ভারতের হকের জল, ভারতের হকে বহবে।’” এই বক্তব্য ভারতের জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার এবং দেশের সক্ষমতার উপর ভরসা রাখার প্রতি মোদীর অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।

   

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া এবং দেশের সক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন, ভারত কেবল সংস্কারের পথে এগোচ্ছে না, বরং বিশ্বের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে নিজেকে একটি প্রাণবন্ত বাণিজ্য ও ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

জিডিপি থেকে জিইপি-র দিকে অগ্রসর ভারত

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এখন যখন মানুষ ভারতের দিকে তাকায়, তখন তারা গর্বের সঙ্গে বলতে পারে, “গণতন্ত্র ফল দিতে পারে।” তিনি জানান, সরকার এখন জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন)-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে গ্রস এমপাওয়ারমেন্ট অফ পিপল (জিইপি) বা জনগণের সামগ্রিক ক্ষমতায়নের ভিত্তিতে অগ্রগতির দিকে এগোচ্ছে। এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি জনগণের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষমতায়নের উপর জোর দেয়।

নদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মোদী বলেন, জল সম্প্রতি মিডিয়ায় তীব্র আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। তিনি জানান, নদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত জলসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করছে, যা কৃষি, শিল্প এবং গ্রামীণ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ওয়াকফ আইন নিয়ে মোদীর বক্তব্য

নতুন ওয়াকফ আইনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আইনের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দশকের পর দশক ধরে অনুভূত হচ্ছিল। কিন্তু ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য এই মহৎ কাজকেও বদনাম করা হয়েছিল। তিনি জানান, “এখন যে সংশোধনীগুলি করা হয়েছে, তা প্রকৃত অর্থে দরিদ্র মুসলিম মা-বোনেদের এবং পশ্মান্দা মুসলিমদের সাহায্য করবে।” এই সংশোধনীগুলি ওয়াকফ সম্পত্তির স্বচ্ছতা এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।

বিকশিত ভারতের স্বপ্ন

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, পরিবর্তনশীল ভারতের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হল ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’ হওয়া। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “দেশের এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সক্ষমতা, সম্পদ এবং ইচ্ছাশক্তি রয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের গণতান্ত্রিক শক্তি, তরুণ জনশক্তি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার পথে প্রধান চালিকাশক্তি।

ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি

ইন্ডিয়া@২০৪৭ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) চূড়ান্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। তিনি জানান, দুটি বড় এবং উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির মধ্যে এই চুক্তি উভয় দেশের উন্নয়নের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। “এটি ভারতে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বাড়াবে এবং ভারতীয় ব্যবসা এবং এমএসএমই-দের জন্য নতুন পথ ও সুযোগ উন্মোচন করবে,” বলেন মোদী। এই চুক্তি ভারতের রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

পাকিস্তানের প্রেক্ষাপটে জল নীতি

সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থানের প্রতিফলন। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত এই চুক্তি স্থগিত করার পাশাপাশি পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল, আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে সমন্বিত চেকপোস্ট বন্ধ এবং পাকিস্তানি বিমানের জন্য ভারতীয় আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী স্পষ্টভাবে বলেন, ভারতের জলসম্পদ এখন থেকে দেশের কৃষি, শিল্প এবং জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে। তিনি জানান, সরকার জলসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে নদী সংযোগ এবং অন্যান্য প্রকল্পে কাজ করছে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর বক্তৃতায় ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, ভারত কেবল অভ্যন্তরীণ সংস্কারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না, বরং বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের তরুণ জনশক্তি, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং নীতিগত স্থিতিশীলতা বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে। এছাড়াও, তিনি ওয়াকফ আইন সংস্কারের মাধ্যমে দরিদ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই বক্তৃতা ভারতের জাতীয় স্বার্থ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিশ্ব মঞ্চে দেশের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের উপর জোর দেয়। সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার মাধ্যমে পাকিস্তানকে দেওয়া কড়া বার্তা, ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং ওয়াকফ আইন সংস্কারের মতো পদক্ষেপ ভারতের সংকল্প এবং দূরদৃষ্টিকে প্রতিফলিত করে। ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য মোদীর নেতৃত্বে ভারত দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছে। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এবং দেশের সক্ষমতার উপর ভরসা রেখে ভারত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতি এবং গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে।

Advertisements