প্রধানমন্ত্রী মোদী রাতভর ‘অপারেশন সিঁদুর’ পর্যবেক্ষণ করেছেন: সূত্র

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাতভর ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, যেখানে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (পিওকে) নয়টি জঙ্গি লক্ষ্যবস্তুতে…

Narendra Modi Monitored Operation Sindoor Overnight as India Hit Terror Camps

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাতভর ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, যেখানে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (পিওকে) নয়টি জঙ্গি লক্ষ্যবস্তুতে মিসাইল হামলা চালিয়েছে। এই হামলা গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও ২৬ জনের প্রাণহানির নৃশংস হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিচালিত হয়েছে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লি থেকে রিয়েল-টাইম উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে বাহাওয়ালপুরে জৈশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) এবং মুরিদকে লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি)-এর সদর দফতরসহ নয়টি নির্দিষ্ট জঙ্গি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে।

সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রী মোদী মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান, প্রবীণ গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের কাছ থেকে নিয়মিত ব্রিফিং গ্রহণ করেছেন। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রাত ১:৪৪ মিনিটে জারি করা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই হামলা “কেন্দ্রীভূত, সুনির্দিষ্ট এবং অ-উত্তেজনামূলক” ছিল। এতে কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি, বরং সীমান্তের ওপারে জঙ্গি অভিযানের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহৃত অবকাঠামোকে লক্ষ্য করা হয়েছে।

   

হামলায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের পাঁচটি স্থান—বাহাওয়ালপুর ও মুরিদকে সহ—এবং পিওকে-র চারটি স্থান—কোটলি, মুজাফফরাবাদ এবং বাঘ—লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। বাহাওয়ালপুর জৈশ-ই-মোহাম্মদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। পাহালগাম হামলার পর গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই অপারেশনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতের প্রতিক্রিয়া সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসবাদের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

হামলার পর ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করেছে। জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কর্মকর্তারা তাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপারেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে ফোনে কথা বলে ভারতের পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

Advertisements

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, বাহাওয়ালপুর ও মুজাফফরাবাদে বিস্ফোরণের ঘটনায় বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি। হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানি সেনারা কুপওয়ারার কার্নাহ এলাকায় এলওসি বরাবর ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে, যার জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী সমান মাত্রায় পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। কার্নাহের বাসিন্দারা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করেন “এটি দ্রুত শেষ হবে।” জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশ উভয় পক্ষকে সংযম ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসলামাবাদ সফর করে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর হাতে-কলমে নেতৃত্ব এই অপারেশনের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ পাকিস্তানের জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ভারতের শক্তিশালী বার্তা। তবে পাকিস্তানের চলমান গোলাবর্ষণ এবং সম্ভাব্য পাল্টা প্রতিক্রিয়া আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায় এখন দুই দেশের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে নজর রাখছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News