বিরোধীদের বার্তা দিতে মণিপুর সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদী

রবিবার ইস্ট ইন্ডিয়া টাইমে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রবাহ মণিপুরের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) সেপ্টেম্বর মাসে মণিপুর সফরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে,…

Prime Minister Narendra Modi Manipur Visit

রবিবার ইস্ট ইন্ডিয়া টাইমে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রবাহ মণিপুরের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) সেপ্টেম্বর মাসে মণিপুর সফরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ২০২৩ সালের জাতিগত সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর তাঁর প্রথম সফর হবে। এই সফরটি শুধু একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়, বরং বিরোধীদের সমালোচনার মুখে উত্তর দেওয়ার এবং মণিপুরের উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চাল হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

সফরের পটভূমি
২০২৩ সালের ৩ মে থেকে মণিপুরে মেইতেই ও কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, যা এখনও সম্পূর্ণভাবে থামতে পারেনি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২২ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত এই সংঘর্ষে ২৫৮ জন নিহত হয়েছে এবং ৬০,০০০ জন বাস্তুহারা হয়েছে। এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী মণিপুর পরিদর্শন করেননি, যা বিরোধী দলগুলো এবং স্থানীয় নাগরিকদের তীব্র সমালোচনার কারণ হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে, মণিপুরের মতো উত্তপ্ত অঞ্চলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুপস্থিতি বিরোধীদের হাতে একটি শক্তিশালী অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মণিপুর সফরের পরিকল্পনা বিরোধীদের সমালোচনার মুখে উত্তর দেওয়ার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

   

সফরের উদ্দেশ্য
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফরটি শুধু রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য নয়, বরং মণিপুরে উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা হিসেবে গঠিত হয়েছে। তিনি ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মিজোরাম ও আসাম সফরের সময় মণিপুরের ইম্ফাল ও চুরাচান্দপুর জেলা পরিদর্শন করতে পারেন। এই সফরে তিনি সংঘর্ষে বাস্তুহারা হওয়া মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেন এবং অঞ্চলের জন্য ১০,০০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প উদ্বোধন করতে পারেন। এই প্রকল্পগুলো স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সামাজিক সংহতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারে।

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে কংগ্রেস, এই সফরকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, মোদী যখন মণিপুরের মানুষ সর্বাধিক সঙ্কটে ছিলেন, তখন তিনি সফর করেননি, এবং এখন এই সফরটি আসন্ন নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। একজন ব্যবহারকারী এক্স পোস্টে জিজ্ঞাসা করেছেন, “কেন এখন? যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, তখন না। কি, কোনো নির্বাচন আসছে নাকি?” এই প্রশ্নটি বিরোধীদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে, যারা মনে করেন এটি কেবলমাত্র ভোটের হিসেবে গণনা করা একটি পদক্ষেপ।

তবে, সমর্থকরা এই সফরকে একটি ইতিবাচক ধাপ হিসেবে দেখছে। তারা মনে করেন, এই সফর সরকারের মণিপুরের পুনরুদ্ধারে গুরুত্ব আরোপ করছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “তাঁর সফর দেখাচ্ছে সরকার মণিপুরের পুনরুদ্ধারকে গুরুত্ব দিচ্ছে, উপস্থিতি নীতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।” অন্যদিকে, কিছু ব্যক্তি মনে করছেন, এই সফরের পিছনে সেনাবাহিনীর সফল কাজের ফলাফল রয়েছে, যিনি বলেছেন, “অর্থাৎ সেনা পুরো শক্তি দিয়ে কাজ করছে।”

Advertisements

জাতিগত সংঘর্ষের ইতিহাস
মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষের শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের এপ্রিলে মণিপুর হাইকোর্টের একটি আদেশের পর, যেখানে মেইতেই সম্প্রদায়কে উপজাতি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তটি কুকি-জো সম্প্রদায়ের প্রবল প্রতিবাদের মুখে পড়ে, যা পরে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো উত্তর-পূর্ব ভারতের জাতিগত সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
প্রধানমন্ত্রী মোদীর মণিপুর সফর স্থানীয় মানুষের মধ্যে আশা জাগিয়ে তুলেছে। তবে, এই সফর সফল হলে তা মণিপুরের শান্তি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি যদি স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সহযোগিতা করে এবং অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেন, তবে এটি সামাজিক সংহতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে। তবে, বিরোধীদের সমালোচনা এড়াতে তাঁকে স্পষ্ট এবং বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

সার্বিকভাবে, মণিপুর সফরটি শুধু একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়, বরং একটি সুযোগ যা মোদী সরকারের জনগণের প্রতি নিষ্ঠার পরীক্ষা করবে। এই সফর কি সত্যিকারের শান্তি আনবে, নাকি রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হবে—এটি ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে পরিষ্কার হবে।