দেশের বিখ্যাত আদিবাসী নেতা বিরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ১৫ নভেম্বর পিএম নরেন্দ্র মোদী ‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’ (Tribal Pride Day) উদ্বোধন করবেন। এই অনুষ্ঠানটি বিহারের জামুইয়ে শুরু হবে এবং ভার্চুয়ালি পিএম মোদী ছত্তিশগড়ের রায়পুরে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘পিএম জনমান স্কিম’ এর সুবিধাভোগীদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করবেন, যা আদিবাসী সমাজের উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং গৌরবকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এই বিশেষ দিনটি ছত্তিশগড়ে ১৫ নভেম্বর উদযাপিত হয়, যেখানে বিরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকীকে সম্মান জানানো হয়। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেব সাইয়ের নেতৃত্বে রাজ্যের প্রতিটি জেলার সদর দপ্তরে এই দিনটি উদযাপন করা হবে। এই দিবসের মাধ্যমে রাজ্যের স্থানীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এবং তাদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে, পাশাপাশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য এবং অবদান উদযাপন করা হবে।
বিশেষ গ্রাম সভার আয়োজন
মূল অনুষ্ঠান শেষে, ১৫ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ছত্তিশগড়ের বিভিন্ন গ্রামে বিশেষ গ্রাম সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভাগুলোতে প্রধান আলোচ্য বিষয় থাকবে বন অধিকার আইন, পিইএসএ আইন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। এর মাধ্যমে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার এবং গ্রামীণ স্তরে তাদের ক্ষমতায়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সরকারের এই উদ্যোগটি আদিবাসীদের উন্নতি এবং তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিরসা মুণ্ডার গৌরবময় অবদান
প্রধানমন্ত্রী মোদী এর আগে অক্টোবর মাসে ঘোষণা করেছিলেন যে, তার সরকার ভারতীয় প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী বিরসা মুণ্ডার ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী পালন করবে এবং দেশবাসীকে এই মহতি উদ্যোগে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। পিএম মোদী তার ‘মন কি বাত’ রেডিও অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেছিলেন, সর্দার প্যাটেল এবং মুণ্ডা দুজনেই ভারতীয় জাতির একীভূতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যদিও তাদের সংগ্রাম ছিল ভিন্ন ভিন্ন। তবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এক, তারা ভারতের একতা এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও উল্লেখ করেছেন, ” বিরসা মুণ্ডা এবং সর্দার প্যাটেল দুজনেই ভারতের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাদের নেতৃত্ব ও সংগ্রাম দেশের ইতিহাসে অনুপ্রেরণার উৎস।”
মুণ্ডার জন্মস্থান পরিদর্শন
গত বছর পিএম মোদী ঝাড়খণ্ডের উলিহাতু গ্রামে বিরসা মুণ্ডার জন্মস্থান পরিদর্শন করেন এবং তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক সফর, যা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের অবদানকে আরও গুরুত্ব দিয়েছে।
ছত্তিশগড়ের আদিবাসী সমাজের জন্য সরকারের উদ্যোগ
ছত্তিশগড় সরকারের পক্ষ থেকে এই ‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’ উপলক্ষে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা, এবং আদিবাসীদের জন্য সরকারী পরিকল্পনা ও সুবিধা নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হবে। এই সব অনুষ্ঠান আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করবে এবং তাদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করবে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নে সরকারের অঙ্গীকার
প্রধানমন্ত্রী মোদী তার বক্তব্যে আরও বলেন, “সরকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার এবং উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। তাদের জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে তারা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে আরও এগিয়ে যেতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “জনজাতীয় গৌরব দিবস শুধু এক দিন উদযাপন নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা এবং তাদের উন্নতির অঙ্গীকারকে আরও দৃঢ় করে তোলে।”
পিএম জনমান স্কিমের সুবিধাভোগীরা
এই অনুষ্ঠানে পিএম মোদী ‘পিএম জনমান স্কিম’ এর সুবিধাভোগীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন। এই স্কিমের মাধ্যমে সরকার আদিবাসী পরিবারগুলিকে আর্থিক সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সুযোগ প্রদান করছে। পিএম মোদী আশা করছেন, এই ধরনের উদ্যোগ আদিবাসী সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং তাদের জীবনের মান উন্নত করবে।
‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’ উদযাপন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত এবং এটি ছত্তিশগড়ের আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি দেশের শ্রদ্ধা এবং তাদের অবদানের স্বীকৃতি। পিএম মোদী এই দিনটির মাধ্যমে আদিবাসী সমাজের উন্নতি এবং তাদের অধিকার রক্ষায় সরকারের প্রচেষ্টাকে দৃঢ় করতে কাজ করছেন। এই দিনটি শুধু এক দিনের উদযাপন নয়, এটি একটি চলমান আন্দোলন, যা আদিবাসী জনগণের প্রতি আমাদের দায়িত্ব এবং প্রতিশ্রুতি পুনঃনির্ধারণ করবে।