গুরুতর অপরাধে গ্রেফতার হবেন প্রধানমন্ত্রীও! লোকসভায় নতুন বিল

কেন্দ্রীয় সরকার লোকসভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করতে চলেছে। যে বিল গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগে গ্রেফতার বা আটক হওয়া প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা রাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদ থেকে…

Prime Minister new loksabha bill

কেন্দ্রীয় সরকার লোকসভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করতে চলেছে। যে বিল গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগে গ্রেফতার বা আটক হওয়া প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা রাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদ থেকে অপসারণের আইনি কাঠামো তৈরি করবে। ‘দ্য কনস্টিটিউশন (ওয়ান হান্ড্রেড অ্যান্ড থার্টিথ অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০২৫’ নামে এই বিলটি কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ আগামীকাল লোকসভায় উত্থাপন করবেন বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে।

এই বিলের মাধ্যমে সরকার শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায়। এই আইনের প্রস্তাব অনুযায়ী, কোনো মন্ত্রী যদি পাঁচ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডের শাস্তিযোগ্য অপরাধে গ্রেফতার হয়ে টানা ৩০ দিন হেফাজতে থাকেন, তবে তাঁকে পদ থেকে অপসারণ করা হবে।

   

প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, যদি প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা রাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগে গ্রেফতার হন এবং ৩০ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের অপসারণের সুপারিশ না করেন, তবে ৩১তম দিনে রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল তাঁকে পদ থেকে অপসারণ করবেন। এই নিয়ম কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

বর্তমানে ভারতের সংবিধানে এমন কোনো স্পষ্ট বিধান নেই, যা গ্রেফতার বা হেফাজতের ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে। এই বিল সেই শূন্যতা পূরণ করতে চায়।

সরকারের মতে, এই বিল শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনবে। গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের পদে থাকা জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করতে পারে। বিশেষ করে, দুর্নীতি, সন্ত্রাস বা অন্যান্য গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে, তাঁদের পদে থাকা শাসনের নিরপেক্ষতার উপর প্রশ্ন তুলতে পারে।

এই বিলের মাধ্যমে সরকার জনগণের আস্থা বজায় রাখতে এবং শাসনব্যবস্থাকে আরও দায়িত্বশীল করতে চায়। গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, এই বিল ভারতীয় সংবিধানের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দেশের আইনি কাঠামোকে শক্তিশালী করবে।

এই বিলটি সংবিধান সংশোধনী বিল হিসেবে লোকসভায় পেশ করা হবে। সংবিধানের সংশোধনের জন্য লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন। এরপর রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে এটি আইনে পরিণত হবে। বিলটি পাশ হলে, গ্রেফতার হওয়া কোনো মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য লোকপালের মতো সংস্থার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।

Advertisements

লোকপাল এবং লোকায়ুক্ত আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং সাংসদদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা যায়। এই নতুন বিল তাদের ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

এই বিল নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “এই বিল শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনবে এবং দায়িত্বশীলতা বাড়াবে।”

তবে, কিছু বিরোধী নেতা মনে করছেন, এই বিলের মাধ্যমে সরকার বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাদের পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে বিরোধী দলগুলো লোকসভায় এই বিলের উপর তীব্র বিতর্কের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কোন কোন আয় করমুক্ত? ITR–এ রিপোর্টের সম্পূর্ণ তালিকা জেনে নিন

এই বিল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, গুরুতর অভিযোগের সংজ্ঞা এবং তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, এই বিলের অপব্যবহার রোধ করা। উদাহরণস্বরূপ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাউকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে, সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে, এই বিল শাসনব্যবস্থায় জনগণের আস্থা বাড়াতে পারে। এছাড়া, এটি দুর্নীতি এবং অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের একটি বার্তা দেবে।