মণিপুর (Manipur ) রাজ্যে আবারও প্রেসিডেন্ট শাসন কার্যকর করা হয়েছে, ৯ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহের পদত্যাগের পর কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার এই শাসন ব্যবস্থা চালু করার ঘোষণা দেয়, যখন রাজ্য সরকারের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই পদক্ষেপটি ছিল নথিভুক্ত করা অনুযায়ী, রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির ভিত্তিতে, যেখানে মণিপুরে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা জাতিগত সংঘাতের কারণে রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।
মণিপুরে মে ২০২৩ থেকে মেইতেই এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে শুরু হওয়া জাতিগত সংঘাতের কারণে প্রায় ২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন। এই সংঘাতের কারণে রাজ্যটির সাধারণ পরিস্থিতি দিন দিন আরও অস্থির হয়ে ওঠে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এক ঘোষণায় জানান, মণিপুরের রাজ্যপালের থেকে একটি রিপোর্ট পাওয়ার পর এবং অন্যান্য তথ্য বিবেচনা করে তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন যে, রাজ্য সরকারের কার্যক্রম ভারতের সংবিধান অনুসারে চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সেইসঙ্গে, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারে অস্থিরতার কারণে প্রেসিডেন্ট শাসন আরোপ করেছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই মণিপুরের সরকার পতনের পর কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপির নেতারা এরই মধ্যে মণিপুরে রাজনৈতিক সংকট কাটাতে নানা আলোচনার মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন।
২০২৪ সালের নভেম্বরে কনরাড সাংমা নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) মণিপুরের বিজেপি সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। এর পর থেকেই রাজ্যে অস্থিরতা শুরু হয় এবং বীরেন সিংহের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। ৯ ফেব্রুয়ারি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে.পি. নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক শেষে বীরেন সিংহ পদত্যাগ করেন।
বীরেন সিংহের পদত্যাগের পর, বিজেপি দলের নেতারা মণিপুরে নতুন মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও, এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। বিজেপির নর্থইস্ট ইনচার্জ সাম্বিত পাত্র এবং দলের স্থানীয় বিধায়কদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হলেও, এখনও রাজ্য সরকারে নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষিত হয়নি।
মণিপুরে জাতিগত সংঘাতের শুরু ২০২৩ সালের মে মাসে, যখন মেইতেই এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া এবং ভূমি অধিকার নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এই সংঘাতে নানা ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে রাজ্যে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। চলমান এ জাতিগত অশান্তির প্রভাব মণিপুরের সাধারণ জনগণের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে তাদের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উপর।
এখন পর্যন্ত ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং অসংখ্য লোক আহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং তাঁদের সঙ্কট আরো গভীর হয়েছে। রাজ্য সরকার এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিলেও, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
মণিপুরের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি শাসিত ছিল, কিন্তু বীরেন সিংহের পদত্যাগের পর দলের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। বিজেপি রাজ্যে নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবনাকে সামনে রেখে আলোচনা চালিয়ে গেলেও, কেউই রাজি হতে পারেননি। সাম্বিত পাত্র এবং রাজ্য সভাপতি এ শার্দা দেবী রাজ্যপাল অজয় কুমার ভল্লার সঙ্গে বৈঠক করেছেন, কিন্তু সেই বৈঠকগুলো তেমন ফলপ্রসূ হয়নি।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের দিক থেকে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে যে দোটানা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাটা কঠিন হয়ে পড়ছে।
মণিপুরের প্রেসিডেন্ট শাসন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপটি রাজ্যের সংবিধানিক সংকটের মোকাবিলা করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, রাজ্যে শান্তি স্থাপন এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফেরানোর জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
শুধু রাজনৈতিক নয়, মণিপুরে জাতিগত সংঘাতের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়েছে। সবার আগে জনগণের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করা, মণিপুরের সমস্ত সম্প্রদায়কে একত্রিত করে সংহতির পরিবেশ সৃষ্টি করা, এবং উন্নয়নমূলক কাজগুলো পুনরায় শুরু করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মণিপুরে প্রেসিডেন্ট শাসন কার্যকর হওয়ার পর থেকে রাজ্যের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করছেন। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধন, জনগণের কল্যাণে কাজ করা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।