নয়াদিল্লি: দেশের ৭৫তম সংবিধান দিবসকে স্মরণীয় করে তুলতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Murmu) বুধবার ভারতের সংবিধানের প্রথম কাশ্মীরি সংস্করণ প্রকাশ করলেন। একই সঙ্গে আরও নয়টি ভারতীয় ভাষায় সংবিধানের ডিজিটাল সংস্করণ উন্মোচন করে কেন্দ্র সরকার ভাষাগত অন্তর্ভুক্তির বার্তা দিল। পুরনো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ‘সংবিধান সদন’ নামের নতুন পরিচয়ও আরও একবার গুরুত্ব পেল।
রাষ্ট্রপতি মুর্মু তাঁর বক্তৃতায় জানান, ভারত আজ বিশ্বের সামনে এক উন্নয়নমুখী গণতন্ত্রের অনন্য মডেল তুলে ধরছে। তিনি বলেন, “সংবিধান প্রণেতারা চাননি ভারত কখনও উপনিবেশিক মানসিকতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকুক। তাঁরা এমন একটি সংবিধান নির্মাণ করেছিলেন, যাতে ব্যক্তিগত অধিকার, গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়ের সমতা সর্বাধিক গুরুত্ব পায়।”
রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে উঠে আসে স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক যাত্রাপথ, সামাজিক সংস্কার এবং সাম্প্রতিক আইনগত পরিবর্তনের কথা। তিনি বলেন, “ত্রিপল তালাক নিষিদ্ধ করে সংসদ এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশের বোনেদের মর্যাদা রক্ষায় পথপ্রদর্শক। GST চালুর মাধ্যমে ভারত অর্থনৈতিক ঐক্যের পথে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছে। আর অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপ দেশের পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক সংহতিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। পাশাপাশি নারী শক্তি বন্ধন আইন নারীকেন্দ্রিক উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।”
উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, উপরাষ্ট্রপতি সিপি রাধাকৃষ্ণন, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি-সহ সকল শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। অনুষ্ঠানে সবাই মিলে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করেন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
উপরাষ্ট্রপতি সিপি রাধাকৃষ্ণন তাঁর বক্তব্য মাতৃভাষা তামিলে শুরু করে জানান, ভাষা শুধু যোগাযোগ নয়—এটি দেশের সাংস্কৃতিক মেরুদণ্ড। তিনি বলেন, “আমাদের সংবিধান প্রণেতারা শুধু আইনি কাঠামো তৈরি করেননি, তাঁরা ভারতের আত্মা প্রতিটি পৃষ্ঠায় অঙ্কিত করেছেন। আম্বেদকর, রাজেন্দ্র প্রসাদ, দুর্গাবাই দেশমুখ-সহ প্রতিটি সদস্য দেশের স্বপ্নকে সংবিধানে রূপ দিয়েছেন।”
কাশ্মীরি এবং বোড়ো ভাষায় সংবিধানের নতুন সংস্করণ প্রকাশ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সরকারি সূত্র জানায়, বহু ভাষায় ডিজিটাল সংবিধান প্রকাশের ফলে নাগরিকদের কাছে সংবিধান আরও সহজবোধ্য হবে এবং আঞ্চলিক ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে সাংবিধানিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
