প্রয়াগরাজে চলমান মহাকুম্ভ মেলায় হাজার হাজার পুণ্যার্থী ভিড় করছেন, যা ভারতের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় আয়োজন। কিন্তু, এই বিপুল ভিড়ের মধ্যে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকায় পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একাধিক দুর্ঘটনা এবং জনস্রোতের চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়ে ভারতীয় রেল কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এই সিদ্ধান্তের ফলে, মেলার পর ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের স্টেশনটি চালু করা হবে।
কুম্ভ মেলা চলাকালীন প্রতি বছরই বিশাল ভিড়ের সৃষ্টি হয়, তবে এবার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী প্রয়াগরাজ আসছেন। ইতিমধ্যে ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ত্রিবেণী সঙ্গমে পুণ্যস্নান করেছেন। কিন্তু, এই মহাকুম্ভে যাত্রীদের ভিড় এতটাই অস্বাভাবিক যে, সঙ্গম স্টেশনে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশনকে ১৪ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু এত বড় জনস্রোতকে সামলাতে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে পুরোপুরি স্টেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মেলা চলাকালীন প্রায় ১৫টি দূরপাল্লার ট্রেনের রুট বাতিল করা হয়েছে। এই ট্রেনগুলো প্রয়াগরাজ জংশনে দাঁড়াবে না এবং পুণ্যার্থীদের অতিরিক্ত ভিড় ঠেকাতে অন্য পথ দিয়ে চালানো হবে। এর ফলে, স্টেশনে আগত যাত্রীদের সংখ্যা অনেকটাই কমবে এবং ভিড়ের চাপ সামলানো সম্ভব হবে।
নয়াদিল্লি স্টেশনে দুর্ঘটনার পর, যাত্রী নিরাপত্তার জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্ল্যাটফর্ম টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে অযথা ভিড় সৃষ্টি না হয়। এছাড়া, প্রয়াগরাজ থেকে সমস্ত দূরপাল্লার ট্রেন অন্য রুটে ঘুরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে সঙ্গম স্টেশনে ভিড় কমানো যায়। এই পদক্ষেপগুলো যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য জরুরি ছিল এবং এর মাধ্যমে অনেক বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মহাকুম্ভের মতো বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলির সময় বিপুল মানুষের আগমন এবং তার ফলে সৃষ্টি হওয়া বিশৃঙ্খলা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে, রেল কর্তৃপক্ষের এখনকার পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। রেলওয়ের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যতটা সম্ভব মানুষকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে, আশা করা যায়।
প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশনের বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত মেলার আয়োজকদের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। রেল কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই পদক্ষেপের ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং দুর্ঘটনা কমে যাবে।