বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে প্রশান্ত কিশোরের আপত্তি

বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) এই সংশোধন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে বলেছেন,…

Prashant Kishor comment on voter list

বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) এই সংশোধন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে বলেছেন, এই সংশোধন রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা এর বিরুদ্ধে। আমরা আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং এই বিষয়ে আলোচনার জন্য আমাদের নির্বাহী কমিটির একটি বৈঠকও ডেকেছি।

কারণ, বিহারে (Prashant Kishor) একটি বড় অংশের মানুষ দিওয়ালি ও ছঠ পুজোর সময় বাইরে থেকে ফিরে আসেন। তাঁদের পক্ষে দিওয়ালি ও ছঠের আগে এসে নির্বাচন কমিশনের ইচ্ছা অনুযায়ী নথি জমা দেওয়া সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে, বিহারের ৩০-৪০ লক্ষ মানুষ, যাঁরা দিওয়ালি ও ছঠের জন্য ফিরবেন, তাঁদের কেউই ভোট দিতে পারবেন না।”

   

এই মন্তব্য (Prashant Kishor)বিহারের রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে।নির্বাচন কমিশন অফ ইন্ডিয়া (ইসিআই) গত ২৬ জুন, ২০২৫-এ বিহারে ভোটার তালিকার এই বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ জারি করে। এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হলো অযোগ্য ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া এবং যোগ্য নাগরিকদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা।

তবে, এই প্রক্রিয়ার সময় এবং নিয়ম নিয়ে বিরোধী দলগুলি তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টি এই প্রক্রিয়াকে ‘ভোটবন্দি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছে, এটি বিহারের গরিব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে।

প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) তাঁর মন্তব্যে জোর দিয়েছেন যে, বিহারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবিকার জন্য রাজ্যের বাইরে কাজ করেন। তাঁরা দিওয়ালি ও ছঠ পুজোর সময় বাড়ি ফিরে আসেন। এই সময়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে নথি জমা দেওয়ার নিয়ম তাঁদের জন্য অসম্ভব। তিনি বলেন, “এই নিয়মের কারণে ৩০-৪০ লক্ষ মানুষ ভোট দিতে পারবেন না। এটি গণতন্ত্রের উপর আঘাত।” তিনি আরও বলেন, এই সংশোধন প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা প্রয়োজন।

ইসিআই-এর নির্দেশ অনুযায়ী, ভোটারদের তাঁদের নিজেদের এবং তাঁদের পিতামাতার জন্মসনদ বা বাসস্থানের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। এই নিয়ম বিহারের মতো একটি দরিদ্র রাজ্যে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে এই ধরনের নথি থাকে না।

বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করেছে, এই প্রক্রিয়া এনআরসি-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের একটি ‘পিছনের দরজা’ হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গ্রামের মানুষের কাছে এই নথি থাকে না। এটি ভোটার তালিকা থেকে তাঁদের বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র।”

Advertisements

বিহারে ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচন নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা। এই সময়ে দিওয়ালি ও ছঠ পুজোর মতো বড় উৎসবের কারণে ভোটার তালিকা সংশোধনের সময়সীমা বিরোধী দলগুলির কাছে অযৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে। ইন্ডিয়া ব্লকের ১১টি দল নির্বাচন কমিশনের কাছে এই বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে এবং আইনি পদক্ষেপের কthা ভাবছে। তারা অভিযোগ করেছে, এই প্রক্রিয়া দুই কোটিরও বেশি ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে।

প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor) জন সুরাজ পার্টি বিহারে একটি তৃতীয় বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে। তিনি দাবি করেছেন, বিহারের ৬২% মানুষ পরিবর্তন চান, এবং নীতীশ কুমার আর মুখ্যমন্ত্রী হবেন না। তিনি বলেন, “জন সুরাজ বিহারে নতুন মুখ্যমন্ত্রী দেবে।” তবে, গত নভেম্বরে চারটি উপনির্বাচনে জন সুরাজ কোনও আসন জিততে পারেনি, যদিও তারা ১০% ভোট পেয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ভোটার তালিকা সংশোধন বিহারের নির্বাচনী রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। জন সুরাজ এই ইস্যুকে তাদের প্রচারে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে যুবক ও মহিলা ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছে। প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor) পদযাত্রা এবং ‘বিহার বদলাও যাত্রা’ ইতিমধ্যে রাজ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

তরুণদের দাপাদাপিতেও তিন পয়েন্ট হাতছাড়া সাদা-কালো জায়ান্টদের

এই পরিস্থিতি বিহারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ কীভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং এর রাজনৈতিক প্রভাব কী হবে, তা আগামী দিনে বিহারের রাজনীতির দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।