ভোটের মুখে সাধারণ মানুষের জন্য বড় ঘোষণা পিকের

বিহারের রাজনীতিতে ফের হইচই ফেলে দিলেন রাজনীতিবিদ প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor)।নির্বাচনের মুখে তিনি একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা শুরু করেছেন। মুজাফফরপুরে নির্বাচনী সফরে…

Prashant Kishor Promises ₹2,000 Pension for Seniors, Free Private School Education for Children Ahead of Bihar Polls

বিহারের রাজনীতিতে ফের হইচই ফেলে দিলেন রাজনীতিবিদ প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor)।নির্বাচনের মুখে তিনি একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা শুরু করেছেন। মুজাফফরপুরে নির্বাচনী সফরে গিয়ে তিনি ঘোষণা করেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলা মাসিক ২,০০০ টাকা পেনশন পাবেন। পাশাপাশি শিশুদের জন্য বেসরকারি স্কুলে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ এবং যুবকদের জন্য ১০-১২ হাজার টাকার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

প্রবীণদের পাশে থাকার বার্তা

   

ভারতের গ্রামীণ সমাজে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আর্থিক সুরক্ষা এখনো বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি পেনশন অপর্যাপ্ত এবং অনিয়মিত। তাই মাসে ২,০০০ টাকা পেনশনের ঘোষণা নিঃসন্দেহে প্রবীণ ভোটারদের কাছে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষত গ্রামীণ বিহারে, যেখানে সন্তানরা উপার্জনের সন্ধানে বাইরে চলে যায়, সেখানে বয়স্করা আর্থিক সঙ্কটে ভোগেন। প্রশান্ত কিশোরের এই আশ্বাস তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

শিক্ষার অধিকারে জোর

প্রশান্ত কিশোর(Prashant Kishor) বলেছেন, শুধুমাত্র সরকারি স্কুল নয়, বেসরকারি স্কুলেও শিশুদের বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে এই ধরনের পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক পরিবর্তন আনতে পারে। কারণ বহু পরিবার আর্থিক সঙ্কটের কারণে সন্তানদের ভালো স্কুলে ভর্তি করাতে পারে না। এই প্রতিশ্রুতি কার্যকর হলে শুধু শিক্ষার মান উন্নত হবে না, দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাও প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারবে।

যুবকদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি

বিহারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল বেকারত্ব। প্রচুর যুবক কাজের খোঁজে দিল্লি, মুম্বই, পাঞ্জাব বা দক্ষিণ ভারতের রাজ্যে পাড়ি জমায়। প্রশান্ত কিশোরের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে যুবকদের জন্য ১০-১২ হাজার টাকার চাকরির সুযোগ তৈরি করা হবে। এতে শুধু অভিবাসনের প্রবণতা কমবে না, বরং রাজ্যের অর্থনীতিতেও গতি আসবে। যদি এটি বাস্তবায়িত হয়, তবে যুব সমাজের মধ্যে প্রশান্ত কিশোরের গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা বাড়তে পারে।

Advertisements

রাজনৈতিক অঙ্কে নতুন খেলা

প্রশান্ত কিশোর একসময় দেশের অন্যতম নির্বাচনী কৌশলবিদ ছিলেন। নরেন্দ্র মোদির ২০১৪ সালের প্রচারাভিযান থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রমুখ নেতাদের সাফল্যে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে এবার তিনি নিজেই মাঠে নেমেছেন। বিহারে জন সুরজ অভিযানের মাধ্যমে তিনি জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তৈরি করছেন। তাঁর এই ঘোষণাগুলি নিঃসন্দেহে এনডিএ এবং মহাজোট—উভয়ের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে।

ভোটারদের প্রতিক্রিয়া

গ্রামাঞ্চলের মানুষ ইতিমধ্যেই এই ঘোষণাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। বিশেষত প্রবীণ এবং নিম্ন আয়ের পরিবারগুলি মনে করছে, এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলে তাঁদের জীবনে সত্যিই পরিবর্তন আসবে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশ্ন হল, এত বড় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কোথা থেকে আসবে? রাজ্যের বাজেট কতটা এই বোঝা সামলাতে সক্ষম হবে, সেটিই আগামী দিনে মূল বিতর্ক হয়ে উঠতে পারে।

প্রশান্ত কিশোরের এই প্রতিশ্রুতি বিহারের রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। পেনশন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান—এই তিনটি মূল ইস্যুতে সরাসরি আঘাত করেছেন তিনি। এখন দেখার বিষয়, ভোটের ময়দানে তাঁর এই পদক্ষেপ কতটা সফল হয় এবং জনগণ সত্যিই তাঁকে “কিংমেকার” থেকে “কিং” করে তুলতে চান কিনা।