নির্বাচনের আগে পিকের পাখির চোখ বিহারের কর্ম সংস্থান

বিহারের রাজনৈতিক ময়দানে জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor)একটি নতুন ঝড় তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, তাঁর দল জন সুরাজের প্রভাব এতটাই বেড়েছে…

Prashant Kishor

বিহারের রাজনৈতিক ময়দানে জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor)একটি নতুন ঝড় তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, তাঁর দল জন সুরাজের প্রভাব এতটাই বেড়েছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বিরোধী নেতা তেজস্বী যাদব পর্যন্ত এখন বিহারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা কর্মসংস্থান নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন।

কিশোর বলেন, “বিহারে জন সুরাজের প্রভাব এতটাই বেড়েছে যে এখন প্রধানমন্ত্রী মোদীও অভিবাসন নিয়ে কথা বলছেন, তেজস্বী যাদবও এই বিষয়ে কথা বলছেন। প্রথমবারের মতো বিহারে কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।” এই বক্তব্য বিহারের রাজনৈতিক সমীকরণে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে জন সুরাজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

   

প্রশান্ত কিশোর, যিনি একজন সফল রাজনৈতিক কৌশলবিদ হিসেবে পরিচিত, ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর জন সুরাজ পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর দলের প্রধান লক্ষ্য হলো বিহারের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলি, যেমন—বেকারি, শিক্ষার অভাব এবং কর্মসংস্থান মোকাবিলা করা। তিনি দাবি করেছেন যে, বিহারের প্রায় প্রতিটি পরিবার অভিবাসনের সমস্যায় জর্জরিত।

ধনী থেকে গরিব, প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ জীবিকার জন্য রাজ্যের বাইরে কাজ করতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “বিহারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অভিবাসন। এখানকার নেতারা অভিবাসনকে উৎসবের মতো উদযাপন করেন, কিন্তু বিহারের জনগণ এর জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করছেন।”

তাঁর মতে, বিহারের যুবকদের রাজ্যের মধ্যেই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি।জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রশান্ত কিশোর বিহারের গ্রামে গ্রামে ঘুরে জনসাধারণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছেন। তিনি ‘বিহার বদলাও যাত্রা’ এবং ‘জন সুরাজ পদযাত্রা’র মাধ্যমে প্রায় ৫,০০০ গ্রামে পৌঁছেছেন।

তাঁর এই প্রচারে তিনি শিক্ষা, কর্মসংস্থানের মতো বিষয়গুলিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিহারের জনগণ আর লালু, নীতিশ বা মোদীর উপর নির্ভর করতে চান না। তারা পরিবর্তন চান।” তাঁর এই বক্তব্য বিহারের প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কিশোরের পাঁচ দফা কর্মসূচির মধ্যে অভিবাসন রোধ করা শীর্ষে রয়েছে। তিনি বলেছেন, “যদি জন সুরাজ ক্ষমতায় আসে, তবে আমরা শিল্প ও বাণিজ্যের প্রচারের মাধ্যমে রাজ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব, যাতে যুবকরা মাসিক ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা আয় করতে পারেন।” তিনি আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, শিক্ষার মান উন্নত করা হবে এবং দরিদ্র শ্রেণির ছাত্রদের জন্য বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনার ফি সরকার বহন করবে।

Advertisements

এছাড়াও, তিনি বয়স্কদের জন্য পেনশন ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২,০০০ টাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।বিহারের রাজনৈতিক মহলে কিশোরের এই দাবি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, “৬০ শতাংশের বেশি বিহারবাসী পরিবর্তন চান। তারা তাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান চান।”

তবে, সমালোচকরা মনে করেন, বিহারের জাতপাত-কেন্দ্রিক রাজনীতি এবং প্রভাবশালী দলগুলির দখলে থাকা রাজনৈতিক কাঠামো জন সুরাজের পথে বড় চ্যালেঞ্জ। পোল ট্র্যাকার ওপিনিয়নের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, জন সুরাজ পার্টি মাত্র ২.৭% ভোট পেতে পারে, যেখানে এনডিএ এবং ইন্ডিয়া জোট যথাক্রমে ৪২.৮% এবং ৪৪.২% ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে, কিশোরের প্রচারে তরুণ ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। তিনি বলেন, “আমি কোনও ভোট চাইতে আসিনি। আমি এসেছি আপনাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য।” তাঁর এই বক্তব্য বিহারের গ্রামীণ এলাকায়, বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে, ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে।

তিনি বিজেপি, জেডি(ইউ) এবং আরজেডি-র মতো দলগুলিকে অভিবাসন, দুর্নীতি এবং শিক্ষার মতো বিষয়ে ব্যর্থ বলে সমালোচনা করেছেন।আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জন সুরাজ ২৪৩টি আসনেই প্রার্থী দেবে বলে ঘোষণা করেছে।

জম্মু-কাশ্মীর বন্যায় বন্ধ বৈষ্ণোদেবী যাত্রা

প্রশান্ত কিশোরের এই উদ্যোগ বিহারের রাজনীতিতে একটি নতুন বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে। তবে, তাঁর এই দাবি এবং প্রচার কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করবে ভোটারদের সমর্থন এবং রাজনৈতিক কৌশলের উপর।