জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর (prashant) তাঁর চলমান ‘বিহার বদলাও যাত্রা’-র সময় রাজ্যের নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, অকার্যকর শাসনের কারণে বিহারে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতার কারণে রাজ্যের শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ফলে, কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা ও মন্ত্রী সরকার এবং জনগণকে শোষণ করতে ব্যস্ত। কিশোর (prashant)বলেন, “বিহারে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে কারণ রাজ্যের নেতৃত্ব অকার্যকর। যখন একজন শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি শীর্ষ পদে থাকেন, তখন সরকারের কোনো কর্তৃত্ব থাকে না।
কেউই প্রকৃতপক্ষে শাসন করছে না। কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা ও মন্ত্রী শুধুমাত্র সরকার ও জনগণের শোষণে মগ্ন। আইনশৃঙ্খলার অবনতি স্পষ্ট, কিন্তু কখনো কি শুনেছেন নীতীশ কুমার এই পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন? এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই নেই।”
কুদনি অঞ্চলের দলিত মেয়ের মর্মান্তিক ঘটনা (prashant)
প্রশান্ত কিশোর (prashant)মুজফফরপুরের কুদনি অঞ্চলের এক দলিত মেয়ের মর্মান্তিক ঘটনার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, “কুদনি অঞ্চলের দলিত মেয়েটির ঘটনা নির্ভয়া কাণ্ডের চেয়েও ভয়াবহ। মুজফফরপুর মেডিকেল কলেজে চার দিন ধরে তিনি কষ্ট পেয়েছেন। পাটনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (পিএমসিএইচ) ভর্তি হতে এক দিন লেগেছে।
ধর্ষণের শিকার এই দলিত মেয়েটির গলা ও জিহ্বা কাটা হয়েছিল, এবং তিনি অ্যাম্বুলেন্সে চার থেকে সাত ঘণ্টা ভর্তির জন্য অপেক্ষা করেছেন। তবুও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পাণ্ডে বড় বড় কথা বলেন, লজ্জার কোনো বালাই নেই।” তিনি আরও বলেন, “কোভিড সংকটের সময়ও বিহারের মানুষ এই ব্যক্তির কার্যকলাপ দেখেছে। যখন গোটা রাজ্য কষ্টে ছিল, তখন তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা আরামে বাংলোয় বসে আনন্দ করছিলেন। এখন সময় এসেছে এই ধরনের লোকদের উৎখাত করার, কারণ এরা কোনো উন্নতি আনবে না।”
ঘটনার বিবরণ
২৬ মে, ২০২৫-এ মুজফফরপুরে এক ১০ বছরের দলিত মেয়ে ধর্ষণ ও নৃশংস হামলার শিকার হয়। ১ জুন পাটনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (পিএমসিএইচ) তিনি মারা যান। তাঁর পরিবার অভিযোগ করে, হাসপাতালে ভর্তির আগে মেয়েটিকে অ্যাম্বুলেন্সে বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
মুজফফরপুর(prashant) এসএসপি সুশীল কুমার জানান, ঘটনাটি ২৭ মে ঘটে। অভিযুক্ত ব্যক্তি পাশের গ্রামের একজন মাছ বিক্রেতা ছিলেন, যিনি মেয়েটিকে প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে এবং তাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়। এফএসএল দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং সমস্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসএসপি আরও জানান, ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করা হবে এবং দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
বিহারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পাণ্ডে এই ঘটনাকে “অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক” বলে নিন্দা করেছেন। তিনি জানান, তিন সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা মুজফফরপুরের শ্রীকৃষ্ণ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (এসকেএমসিএইচ) এবং পিএমসিএইচ-এর ঘটনার বিবরণ সংগ্রহ করবে।(prashant)
তিনি বলেন, “ঘটনার পরপরই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুজফফরপুর এসএসপি নিশ্চিত করেছেন যে ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।” তবে, বিরোধী দলগুলো এই ঘটনাকে রাজ্যের “ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলার” প্রতিফলন হিসেবে সমালোচনা করেছে। কংগ্রেস মঙ্গল পাণ্ডের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করেছে, এবং আরজেডি এই ঘটনাকে “প্রশাসনিক উদাসীনতা” হিসেবে অভিহিত করেছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পদক্ষেপ
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) এই ঘটনার স্বতঃপ্রণোদিত সংজ্ঞান নিয়েছে। তারা ১ জুন পিএমসিএইচ-এ মেয়েটির মৃত্যুর বিষয়ে মিডিয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে বিহারের ডিজিপি এবং স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসওয়ান এই ঘটনাকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার “গভীর ব্যর্থতা” হিসেবে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কু(prashant)মারের কাছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি পিএমসিএইচ-এর অবহেলার কথাও তুলে ধরেন, যেখানে শিশুটিকে ছয় ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সে চিকিৎসা ছাড়াই অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
প্রস্তুতিতে ধাক্কা ভারতের, থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের স্বাদ সুনীলদের
প্রশান্ত কিশোরের সমালোচনা ও আহ্বান
প্রশান্ত কিশোর (prashant)তাঁর ‘বিহার বদলাও যাত্রা’-র মাধ্যমে বিহারের জনগণকে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “পরের বার ভোট দেওয়ার সময় লালু প্রসাদ যাদব, নীতীশ কুমার বা প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুখের দিকে তাকাবেন না। আপনার সন্তানদের ভবিষ্যতের দিকে তাকান। শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং জনগণের শাসনের জন্য ভোট দিন।”
তিনি নীতীশ কুমারের নেতৃত্বকে “অফিসারদের জঙ্গল রাজ” হিসেবে অভিহিত করেন এবং দাবি করেন যে, রাজ্যটি কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত আমলার হাতে চলছে। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর মন্ত্রীদের নাম ও দপ্তর উল্লেখ করার চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, দাবি করে যে নীতীশ কুমার মানসিকভাবে অক্ষম।
মুজফফরপুরের এই মর্মান্তিক ঘটনা বিহারের আইনশৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর সংকট প্রকাশ করেছে। প্রশান্ত কিশোরের (prashant)সমালোচনা এবং জন সুরাজের প্রচারণা রাজ্যের জনগণের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষাকে উস্কে দিচ্ছে। ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনা রাজ্যের শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রতি জনগণের ক্ষোভকে আরও তীব্র করেছে। ন্যায়বিচার এবং প্রশাসনিক সংস্কারের দাবি জোরালো হচ্ছে, এবং এই ঘটনা বিহারের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।