জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত রাজনৈতিক কৌশলী প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) সম্প্রতি একটি জনসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা শুধুমাত্র একটি সমীকরণে বিশ্বাস করি, আর তা হল আদর্শভিত্তিক সমীকরণ।
এই দেশের অর্ধেকের বেশি হিন্দু বিজেপির সঙ্গে আদর্শের ভিত্তিতে নেই। জন সুরাজের ফর্মুলা হল, যারা মহাত্মা গান্ধী, জয়প্রকাশ নারায়ণ, বাবাসাহেব আম্বেদকর এবং রাম মনোহর লোহিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী, সেই সমস্ত হিন্দুদের মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে একটি সামাজিক-রাজনৈতিক জোট গঠন করা উচিত।
এই জোট গঠিত হলে আমরা বিজেপিকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করতে পারব।” এই বক্তব্য বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।জন সুরাজের রাজনৈতিক কৌশলপ্রশান্ত কিশোর, যিনি এক সময় বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস এবং জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর মতো দলগুলোর জন্য নির্বাচনী কৌশল প্রণয়ন করেছেন, ২০২২ সালে জন সুরাজ পার্টি গঠন করেন।
তাঁর এই নতুন দল বিহারে একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। কিশোরের এই বক্তব্য বিজেপির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার বিরুদ্ধে একটি সামাজিক-রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি দাবি করেছেন, বিজেপির সঙ্গে থাকা হিন্দু ভোটারদের বড় একটি অংশ ধর্মীয় মেরুকরণের ভিত্তিতে নয়, বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে সমর্থন দিয়ে থাকে।
তাই গান্ধী, আম্বেদকর, জয়প্রকাশ এবং লোহিয়ার সমাজবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের ভিত্তিতে একটি নতুন জোট গঠন করা সম্ভব।প্রশান্ত কিশোরের এই প্রস্তাব বিহারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিহারে মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ শতাংশ, এবং তারা ঐতিহ্যগতভাবে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং কংগ্রেসের মতো দলগুলোর ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত।
কিশোরের দাবি, তাঁর প্রস্তাবিত জোট এই ভোটব্যাঙ্কের সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশকে একত্রিত করতে পারে, যারা বিজেপির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, “বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি গান্ধী, আম্বেদকর বা লোহিয়ার আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমরা এই আদর্শের ভিত্তিতে একটি নতুন সমীকরণ তৈরি করতে চাই।”
প্রশান্ত কিশোরের এই বক্তব্য বিহার এবং জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিজেপি এই প্রস্তাবকে ‘মুসলিম তোষণ’ এবং ‘হিন্দু-বিরোধী’ হিসেবে সমালোচনা করেছে। বিজেপির মুখপাত্র সম্ভিত পাত্র বলেন, “প্রশান্ত কিশোর নিজের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে এই ধরনের বিতর্কিত বক্তব্য দিচ্ছেন।
বিজেপি হিন্দু-মুসলিম সকলের জন্য কাজ করে, এবং আমাদের আদর্শ জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে।” অন্যদিকে, আরজেডি এবং কংগ্রেস এই বক্তব্যের প্রতি সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেন, “বিহারের জনগণ সবসময় সম্প্রীতি ও সমাজবাদী আদর্শে বিশ্বাসী। তবে, জন সুরাজের এই প্রস্তাব কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, তা সময়ই বলবে।”
এক্স প্ল্যাটফর্মে এই বক্তব্য নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “প্রশান্ত কিশোর বিজেপির বিরুদ্ধে একটি নতুন সমীকরণ তৈরির চেষ্টা করছেন, তবে এটি কি বিহারের জনগণ গ্রহণ করবে?” আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, “কিশোরের এই কৌশল বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে, তবে এটি ধর্মীয় মেরুকরণকেও উস্কে দিতে পারে।”
বিহারে ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হতে চলেছে। বিজেপি-জেডিইউ জোটের বিরুদ্ধে আরজেডি-কংগ্রেসের মহাজোট ইতিমধ্যেই শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে জন সুরাজের প্রবেশ বিহারের রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করছে।
প্রশান্ত কিশোরের এই হিন্দু-মুসলিম জোটের প্রস্তাব বিহারের সামাজিক গতিশীলতার উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে জাত-ভিত্তিক ভোট এবং ধর্মীয় সমীকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে, এই জোট বাস্তবায়ন করা তাঁর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে, কারণ বিহারের জনগণের মধ্যে বিজেপির একটি শক্ত ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে।প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টি গান্ধী, আম্বেদকর, জয়প্রকাশ এবং লোহিয়ার আদর্শের ভিত্তিতে হিন্দু-মুসলিম জোট গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে একটি নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরির চেষ্টা করছে।
সমর্থকদের জোটে রাজি নন, সিপিএম চায় আগে কথা বলুক কংগ্রেস
এই প্রস্তাব বিহারের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচনে এর প্রভাব লক্ষণীয় হতে পারে। তবে, এই কৌশল কতটা সফল হবে এবং এটি কি বিহারের জনগণের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতে পারবে, তা সময়ই বলবে।