বিহারে ভোটগণনা শুরু হতেই রাজনৈতিক আবহ আরও উত্তপ্ত। রাস্তাঘাট থেকে দলীয় কার্যালয়, সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে পোস্টার–যুদ্ধ। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে উদ্দেশ্য করে আরজেডি-র তির্যক বার্তা ‘অলবিদা চাচা’ যেমন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, তেমনই জেডিইউ শিবিরে উচ্ছ্বাস বাড়াচ্ছে ‘টায়গার এখনও জিন্দা’ হ্যায় স্লোগান। প্রাথমিক গণনায় এনডিএ ১০০-র বেশি আসনে এগিয়ে রয়েছে, আর তাই দুই জোটের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই ইতিমধ্যেই তুঙ্গে।
‘অলবিদা চাচা’: নীতীশকে বিদায় জানানোর পোস্টার আরজেডি অফিসে
পাটনার আরজেডি সদর দফতরে সকাল থেকেই নজর কেড়েছে বিশাল পোস্টার—“অলবিদা চাচা”। পোস্টারে দেখানো হয়েছে নীতীশ কুমার তাঁর চেয়ার ছেড়ে হেঁটে চলে যাচ্ছেন, যেন এটিই তাঁর রাজনৈতিক অধ্যায়ের শেষ।
মহাগঠবন্ধনে লড়াই করা আরজেডি ১৪৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, আর গণনার প্রথম দিকের ওঠানামা সত্ত্বেও দলীয় কর্মীদের আত্মবিশ্বাস অটুট। তেজস্বী যাদব বারবার বলছেন—১৮ নভেম্বর তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন। এই ঘোষণা পোস্টার রাজনীতিকে আরও শাণিত করেছে।
মোকামায় তপ্ত পরিবেশ: ‘জেল কা ফটক টুটেগা’ পোস্টার ঘিরে আলোড়ন Poster Politics in bihar
মোকামায় ভোটের আগে ও পরে সমানভাবে আলোচনায় জেডিইউ প্রার্থী আনন্ত সিং। গণনার দিন তাঁর সমর্থকদের লাগানো পোস্টারে স্পষ্ট বার্তা, “জেল কা ফটক টুটেগা, হামারা শের ছুটেগা”।
২ নভেম্বর জন সুরাজ কর্মী দুলারচন্দ যাদব হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হন আনন্ত সিং। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, কঠিন ও ভোঁতা কিছু দিয়ে আঘাতের ফলে কার্ডিও–রেসপিরেটরি ফেলিওরেই মৃত্যু হয় ওই কর্মীর। এই মামলায় আনন্ত সিং ছাড়া আরও দু’জন—মাণিকান্ত ঠাকুর ও রঞ্জিত রামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মোকামা, যেখানে ৬ নভেম্বর প্রথম দফায় ভোট হয়েছে, সেখানে ত্রিমুখী লড়াই—আনন্ত সিং (জেডিইউ), প্রিয়দর্শী পিয়ূষ (জন সুরাজ) এবং বীণা দেবী (আরজেডি)—স্থানীয় উত্তেজনাকে ক্রমেই বাড়িয়ে তুলেছে।
জেডিইউ-র পাল্টা আক্রমণ: ‘টায়গার এখনও জিন্দা’
নীতীশ কুমারের নেতৃত্ব পুনরুদ্ধারেই জেডিইউ-র প্রচারের মূল সুর। দলীয় নেতাদের দাবি, “টাইগার আভি ভি জিন্দা হ্যায়”—এই স্লোগান শুধু পোস্টার নয়, মাটির রাজনীতিতেও নীতীশের অবিচল অবস্থানকে প্রতিষ্ঠা করছে।
সাবেক মন্ত্রী রঞ্জিত সিংহের উদ্যোগে সাজানো এই পোস্টারগুলোতে নীতীশকে দেখানো হয়েছে পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর ‘অব্যাহত দাপটের’ প্রতীক।
উচ্চতম ভোটদানের রেকর্ড, নজর এখন গণনার দিকে
৬ এবং ১১ নভেম্বর দুই দফায় বিহারে ভোটদান হয়েছে ৬৭.১৩%, স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ টার্নআউট। ২৪৩টি আসনে ভোটগণনা এগোচ্ছে, আর সারা দেশের নজর এখন একটাই প্রশ্নে, নীতীশ কুমার কি তাঁর দীর্ঘ শাসনকাল বজায় রাখতে পারবেন? নাকি মহাগঠবন্ধনের উত্থানে বদলে যাবে বিহারের রাজনৈতিক সমীকরণ?
অধিকাংশ এক্সিট পোল এনডিএ-কে এগিয়ে রাখলেও, ফলাফলই শেষ বিচারে নির্ধারণ করবে বিহারের নতুন রাজনৈতিক ছবিকে।


