পাকিস্তান (pakistan) সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণে জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চে অবস্থিত কেন্দ্রীয় গুরুদ্বার শ্রী গুরু সিং সভা সাহিবের উপর হামলার ঘটনায় শিরোমণি অকালি দলের (এসএডি) নেতা সুখবীর সিং বাদল তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এই হামলায় তিনজন শিখ নাগরিক—অমৃক সিং জি (রাগী সিং), ভাই অমরজিৎ সিং এবং রঞ্জিত সিং নিহত হয়েছেন।
বাদল এই “অমানবিক হামলা”র নিন্দা করে বলেন
এক্স-এ একটি পোস্টে বাদল এই “অমানবিক হামলা”র নিন্দা করে বলেন, “আমরা নিহত গুরশিখদের পরিবারের প্রতি সম্পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি এবং তাদের আত্মার শান্তি ও পরিবারের সদস্যদের সাহসের জন্য প্রার্থনা করছি। আমরা দাবি করছি যে এই শহিদদের ত্যাগের জন্য সম্মান প্রদর্শন করা হোক এবং তাদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।”
তিনি আরও বলেন, “শিখ সম্প্রদায় সবসময় দেশের তরোয়াল হিসেবে কাজ করেছে এবং আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশে অটলভাবে দাঁড়িয়ে আছি। শান্তির পক্ষে থাকলেও, শত্রুর দ্বারা আমাদের সম্মানে আঘাত করা হলে আমরা আমাদের দেশপ্রেমের দায়িত্ব পালনে কখনও পিছপা হব না।”
ভগবন্ত মানও এই ঘটনার নিন্দা করে বলেন
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানও এই ঘটনার নিন্দা করে বলেন, “পুঞ্চ সেক্টরের এলওসি-র কাছে অবস্থিত একটি গুরুদ্বারায় পাকিস্তানের বোমা হামলার খবর এসেছে। এই হামলায় রাগী সিং ভাই অমৃক সিং, অমরজিৎ সিং, রঞ্জিত সিং এবং রুবি কৌর নিহত হয়েছেন।
যেখানে সকলের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করা হয়, সেখানে এই হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করা সম্পূর্ণ ভুল।” তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে গুরু সাহিবের কাছে প্রার্থনা করেন যেন প্রয়াত আত্মারা শান্তি লাভ করে এবং পরিবারগুলো এই অসহনীয় কষ্ট সহ্য করার শক্তি পায়।
অপারেশন সিঁদুর ও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া (pakistan)
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তান (pakistan) সেনাবাহিনী বুধবার জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী বেসামরিক এলাকাগুলোতে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থলের দৃশ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক অবকাঠামো, ভাঙা জানালার কাচ, ফাটা দেয়াল এবং গ্রামের গলিতে ছড়িয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে।
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী বুধবার ভোরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (পিওজেকে) গভীরে অবস্থিত সন্ত্রাসী আস্তানায় হামলা চালায়। এই অভিযানে পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে এবং সিয়ালকোট সহ চারটি এবং পিওজেকে-র পাঁচটি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে বিশেষ নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়।
এই সমন্বিত অভিযানটি প্রতিরক্ষা বাহিনী দ্বারা সম্পাদিত হয়, যেখানে সম্পদ এবং সৈন্যদের একত্রিত করা হয়। এই অভিযান ২২ এপ্রিলের পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়, যেখানে ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও জরুরি বৈঠক
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সীমান্ত এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অপারেশন সিঁদুরের পরিপ্রেক্ষিতে একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।
প্রয়াত শিল্ড জয়ী ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার
পুঞ্চে ক্ষয়ক্ষতি ও জনজীবনে প্রভাব
পাকিস্তানের (pakistan) গোলাবর্ষণে পুঞ্চ, কুপওয়ারা এবং বারামুলা জেলায় বাড়ি এবং দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। পুঞ্চে গুরুদ্বার শ্রী গুরু সিং সভা সাহিবের ক্ষতি শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এই হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন রাগী সিং এবং একজন প্রাক্তন সেনা সদস্য ছিলেন, যা এই ঘটনার গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
জাতীয় ও আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলা শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সুখবীর সিং বাদলের পাশাপাশি, হরসিমরত কৌর বাদলও এই হামলার নিন্দা করে বলেন, “পাকিস্তানের (pakistan) এই কাপুরুষোচিত হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।” তিনি ভারত সরকারের কাছে এই শহিদদের ত্যাগের জন্য সম্মান ও তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।
পাঞ্জাবের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এবং সামাজিক সংগঠন এই হামলার নিন্দা করেছেন। পাঞ্জাব কংগ্রেসের নেতা রণদীপ নাভা এই হামলাকে “অমানবিক” আখ্যা দিয়ে নিহতদের পরিবারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। একইভাবে, অন্যান্য নেতারাও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
অপারেশন সিঁদুর (pakistan) ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানকে শক্তিশালী করলেও, পাকিস্তানের পাল্টা গোলাবর্ষণ পুঞ্চ ও তাংধারে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গুরুদ্বারায় হামলা শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থানের উপর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সুখবীর সিং বাদল এবং ভগবন্ত মানের মতো নেতারা এই হামলার নিন্দা করে জাতীয় ঐক্য ও প্রতিরোধের বার্তা দিয়েছেন। সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপত্তা এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।