নয়াদিল্লি, ৫ ডিসেম্বর: সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের মধ্যেই ওয়াকফ (Zia Ur Rahman Barq jihad remark) আইন নিয়ে যে আগুন জ্বলছিল, তাতে আরও ঘৃতাহুতি হল আজ। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জিয়া উর রহমান বার্ক সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে সমাজবাদী পার্টির আরেক সাংসদ মহিবুল্লাহ নাদভির ‘জিহাদ’ শব্দ ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করলেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন।
তিনি বললেন, “ভারতীয় মুসলিমরা দেশের জন্য যা যা করেছেন, তার হিসাব দিতে গেলে বই হয়ে যাবে। কিন্তু আজ রাজনৈতিক লাভের জন্য যে বৈষম্য আর অবিচারের শিকার হচ্ছি, তা মেনে নেওয়া যায় না। ‘জিহাদ’ মানে হিংসা নয়। বহু প্রেক্ষাপটে জিহাদ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গলা তোলা। আর ওয়াকফ আইনটা যেভাবে আমাদের গলায় চেপে ধরা হয়েছে, তাতে গলা না তুলে উপায় কী?”
‘চাঁদে পাওয়া বালি’ থেকেই শক্তি পাবে রকেট! AI-চালিত ব্যাটারি তৈরি মহাকাশ সংস্থার
বার্কের কথায় স্পষ্ট, মুসলিম সমাজের মধ্যে যে ক্ষোভ জমছে, তা আর শুধু চাপা নয়। তিনি বলেন, “নতুন ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে যখন দেশের প্রায় সব মুসলিম সংগঠন, আলেম-ওলামা, ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যানরা রাস্তায় নেমেছিলেন, তখন সরকার কান দেয়নি। আজ পর্যন্ত নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ১৮-১৯ শতাংশ। সরকার যদি সত্যিই আন্তরিক হতো, তাহলে নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়িয়ে দিত। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। আশ্বাসের কথা শুনিয়ে শুনিয়ে আমাদের ঠকানো হচ্ছে।”
এই বক্তব্য এসেছে ঠিক যখন গতকাল সমাজবাদী পার্টিরই সাংসদ মহিবুল্লাহ নাদভি সংসদের বাইরে বলেছিলেন, “যদি ওয়াকফ সম্পতি আমাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে আমরা জিহাদ করব।” তাঁর এই ‘জিহাদ’ শব্দটি নিয়ে বিজেপি তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু থেকে বিজেপি সাংসদরা বলছেন, “সংসদ চত্বরে জিহাদের হুমকি!”
কিন্তু আজ জিয়া উর রহমান বার্ক সেই শব্দটির ব্যাখ্যা দিয়ে দিলেন—এবং সরাসরি সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন।তিনি আরও বলেন, “মুসলিমরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে, স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছে, সংবিধান রচনায় ভূমিকা রেখেছে। আজ যখন আমাদের সম্পত্তির উপর হাত দেওয়া হচ্ছে, তখন আমরা শান্তিতে প্রতিবাদ করছি। কিন্তু যদি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকেও ‘জিহাদ’ বলে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে বোঝা যায় কার মানসিকতা কোন দিকে।”
বার্কের কথায় বারবার উঠে এলো, ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে মুসলিম সমাজের মধ্যে যে ভয় আর অসুরক্ষার ভাব তৈরি হয়েছে, তা আর লুকোনো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “একের পর এক ওয়াকফ বোর্ডের জমি সরকারি দফতরে চলে যাচ্ছে। রেল, হাইওয়ে, এয়ারপোর্টের নামে ছিনতাই হচ্ছে। আমরা আইনের মাধ্যমে লড়ছি, কিন্তু আইনটা যদি একপেশে হয়, তাহলে কোথায় যাব?”সংসদ চত্বরে আজ বিরোধী দলগুলোর মধ্যে একটা অদ্ভুত ঐক্য দেখা গেল।
তৃণমূল, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে—সবাই ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে একই সুরে কথা বলছেন। কিন্তু সমাজবাদী পার্টির দুই সাংসদের ‘জিহাদ’ নিয়ে বক্তব্য বিজেপিকে বড় অস্ত্র দিয়ে দিয়েছে। দলের অন্দরে অস্বস্তি থাকলেও আখিলেশ যাদব এখনও মুখ খোলেননি। তবে দলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, “আমরা বোঝাচ্ছি, শব্দ বাছাইয়ে সাবধান থাকতে হবে। কিন্তু ক্ষোভটা তো সত্যি।”

