ভারত বিরোধী এজেন্ডায় ইউনুস সরকারের ডাকে বাংলাদেশে জাকির

zakir-naik-bangladesh-visit-2025-controversy

ঢাকা: ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড ধর্মপ্রচারক জাকির নায়েককে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই খবরে তোলপাড় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহল। ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA) ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)-এর নজরবন্দি এই বিতর্কিত বক্তাকে ২০২৫ সালের নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশে ‘আন্তর্জাতিক ইসলামিক কনফারেন্স’-এর জন্য আনা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisements

সূত্র অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় আত্মগোপনে থাকা জাকির নায়েককে ২৮ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরের আনুষ্ঠানিক অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ড. জাকির নায়েক মুসলিম বিশ্বের একজন অনুপ্রেরণাদায়ক চিন্তাবিদ। তাঁর বক্তৃতা আমাদের সমাজে ইসলামি মূল্যবোধ জাগ্রত করবে।”

পাক জেনারেলকে দেওয়া বাংলাদেশের মানচিত্রে ভারতের উত্তর–পূর্ব! বিতর্কে ইউনূস

কিন্তু এই সফর নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে দুই দেশেই। ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কূটনৈতিক মহল মনে করছে, বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেবলই এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অনুমতি নয় বরং এটি ভারতের বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে বৈরিতা তৈরির একটি প্রচেষ্টা। কারণ জাকির নায়েক ভারতের একাধিক রাজ্যে ঘৃণাত্মক ও বিভাজনমূলক বক্তৃতা দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।

২০১৬ সালে ঢাকার হোলি আর্টিজান ক্যাফে হামলার পর নায়েকের বক্তৃতার ভিডিও পাওয়া গিয়েছিল হামলাকারীদের কাছে। সেই ঘটনার পরই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর ‘ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ (IRF) নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে NIA ও ED তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, সন্ত্রাসবাদে প্ররোচনা ও ঘৃণাত্মক ভাষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন।

তবে বাংলাদেশে তাঁর এই সফরকে ঘিরে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা মহলের দাবি, “জাকির নায়েকের বাংলাদেশ সফর কেবল ধর্মীয় প্রচারণা নয়, বরং ভারতের বিরুদ্ধে ঘৃণার বীজ ছড়ানোর চেষ্টা।”

Advertisements

অন্যদিকে, বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এই সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এক বিএনপি নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “এই সরকারের আমলে বারবার চরমপন্থীদের প্রভাব বেড়েছে। এখন আবার জাকির নায়েককে এনে ইসলামের নামে বিভাজন ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।”

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, দিল্লি এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি উত্থাপন করা হতে পারে, কারণ জাকির নায়েক ভারতের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে ইসলামি আবেগকে কাজে লাগাতে চাইছে। জাকির নায়েকের সফর তারই একটি অংশ যা দক্ষিণ এশিয়ার ধর্মনিরপেক্ষ মানচিত্রে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কথায়, “এই সফর বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থানকে জটিল করে তুলবে। একদিকে ভারতকে সরাসরি উসকানি, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণভাবে ধর্মীয় উগ্রতার পুনরুত্থান দুই বিপদের মুখে পড়বে ঢাকা।”

মানবাধিকার কর্মীদেরও আশঙ্কা, নায়েকের বক্তব্য তরুণ সমাজকে আরও ধর্মান্ধ করে তুলতে পারে, বিশেষত এমন সময়ে যখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মীয় মেরুকরণ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবই সংকটে।